যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে ‘ওবামাকেয়ার’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মামলা, স্বাস্থ্যখাতে প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির সুপ্রিম কোর্টে ‘আফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ বা ‘ওবামাকেয়ার’ নিয়ে চলমান একটি মামলার রায় আসতে চলেছে।
এই মামলার ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার, সেই সাথে স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিষয়ক মন্ত্রী (এইচএইচএস) হিসেবে রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের ক্ষমতা কতটা বাড়বে, তা-ও।
ওবামাকেয়ার হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুগান্তকারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন। এর মাধ্যমে দেশটির নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা এবং স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই আইনের অধীনে, কিছু প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়ার কথা রয়েছে। ক্যান্সার স্ক্রিনিং, হৃদরোগ প্রতিরোধের ওষুধ, এইচআইভি প্রতিরোধের ওষুধ এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ—এগুলো বিনামূল্যে পাওয়ার অন্তর্ভুক্ত।
কিন্তু বর্তমানে, এই বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মামলার মূল বিষয় হলো, এই বিনামূল্যে পরিষেবাগুলো প্রদানের ক্ষেত্রে, ‘ইউএস প্রিভেন্টিভ সার্ভিসেস টাস্ক ফোর্স’ নামক একটি সরকারি সংস্থার সুপারিশগুলো কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ।
এই সংস্থাটি স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, এই সংস্থার সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু সাংবিধানিক জটিলতা রয়েছে।
কারণ, তাদের মতে, এই সংস্থার সদস্যরা সিনেটে অনুমোদিত নন।
এই মামলার রায় একদিকে যেমন স্বাস্থ্যসেবার অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলবে, তেমনই অন্যদিকে, এইচএইচএস সেক্রেটারি রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
কেনেডি জুনিয়র, যিনি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন নীতি নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তোলেন, এই মামলায় জয়ী হলে স্বাস্থ্যখাতে তার প্রভাব আরও বাড়বে।
বর্তমানে তিনি এইচএইচএস-এর কর্মকাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছেন। এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে, তিনি একটি নতুন ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর এ হেলদি আমেরিকা’ তৈরি করতে চান, যার জন্য প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে।
মামলার শুনানিতে, ট্রাম্প প্রশাসনের বিচার বিভাগ ওবামাকেয়ারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে এই আইনটি বাতিল করতে চেয়েছিল। তবে, বর্তমান মামলায় সরকারের জয় হলে, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের বিষয়টি বহাল থাকবে।
একইসাথে, ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি নির্ধারণে কেনেডি জুনিয়রের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় এই বিতর্কের সমাপ্তি ঘটাবে না। বরং, স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতিমালা তৈরিতে এইচএইচএস-এর ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সুপারিশের ক্ষেত্রে, এইচএইচএস বিজ্ঞানসম্মত উপাত্ত অনুসরণ করবে, নাকি নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবে—সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আদালতের বাইরে, কেনেডি জুনিয়র টিকা বিষয়ক পরামর্শক একটি কমিটির বিরুদ্ধেও বেশ সমালোচনা করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেছেন, এই কমিটি টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ।
এ মামলার রায় শুধু একটি আইনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন