এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাজিব বুকেলে ভেনেজুয়েলার কারাগারে বন্দী রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিতাড়িত ২শ’ ৫২ জন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। রবিবার এক বিবৃতিতে বুকেলে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে তার হেফাজতে থাকা রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান।
খবর অনুযায়ী, বিতাড়িত নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা বেশ কয়েকজন ভেনেজুয়েলার নাগরিক, যাদের সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বুকেলের প্রস্তাব অনুযায়ী, মাদুরো যদি রাজি হন, তাহলে এল সালভাদরে থাকা বিতাড়িত ২শ’ ৫২ জন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। বিনিময়ে মাদুরো সরকার মুক্তি দেবে তাদের রাজনৈতিক বন্দীদের।
এই তালিকায় রয়েছেন সাংবাদিক রোলন ক্যারেনো, মানবাধিকার আইনজীবী রিসিও সান মিগুয়েল এবং বিরোধী নেতা মারিয়া করিয়া মাচাদোর মা কোরিয়া প্যারিসকা দে মাচাদো।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের, জার্মানির ও ফ্রান্সের নাগরিকসহ প্রায় ৫০ জনের বেশি ভিন্ন দেশের বন্দীও রয়েছেন এই তালিকায়।
তবে বুকেলের এই প্রস্তাবকে ভেনেজুয়েলার প্রধান কৌঁসুলি তারেক উইলিয়াম সাব তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন এল সালভাদর সরকার ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের বেআইনিভাবে বন্দী করে রেখেছে।
তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা কোনো বিচারকের সামনে হাজির হয়েছিলেন কিনা, তাদের আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে কিনা— এমন নানা প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সাব বুকেলেকে ‘নব্য ফ্যাসিবাদী’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন।
তার অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র ও এল সালভাদরে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের সঙ্গে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করা হচ্ছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।
অন্যদিকে, মার্কিন বিশেষ দূত অ্যাডাম বোয়েলার বুকেলের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করে জানান, প্রস্তাবিত বন্দী বিনিময়ে ১০ জন মার্কিন নাগরিকও রয়েছেন।
জানা গেছে, গত মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র কমপক্ষে ২০০ জন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে এল সালভাদরে ফেরত পাঠায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা ‘ট্রেন দে আরুয়া’ নামক একটি অপরাধী চক্রের সদস্য।
বর্তমানে এল সালভাদর তাদের একটি বিশেষ কারাগারে বন্দী করে রেখেছে।
এজন্য যুক্তরাষ্ট্র এল সালভাদরকে ৬০ লাখ ডলার দিচ্ছে।
ভেনেজুয়েলার সরকার যদিও বরাবরই বলে আসছে, তাদের দেশে কোনো রাজনৈতিক বন্দী নেই। কারাগারে আটককৃত সবাই বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে সাজা ভোগ করছেন।
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, রাজনৈতিক কারণে বর্তমানে ৮০০ জনের বেশি মানুষ কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
এদিকে, বিতাড়িত নাগরিকদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভেনেজুয়েলার সরকার। এমনকি তাদের আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যরাও একই দাবি করেছেন।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে, যেখানে ভেনেজুয়েলার কিছু নাগরিককে সন্ত্রাসী সন্দেহে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান