অস্ট্রেলিয়ায় ইস্টার ছুটির মৌসুমে পানিতে ডুবে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস (NSW)-এর একটি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতে, নয় বছর বয়সী এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে, যা এই শোকের কারণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, শিশুটি পাথরের মধ্যে আটকা পড়ে মারা যায়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইস্টার উইকেন্ডে সমুদ্র সৈকতগুলোতে অতিরিক্ত মানুষের সমাগম হয়। এই সময়ে সমুদ্রে শক্তিশালী ঢেউ ছিল, যার ফলে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নিউ সাউথ ওয়েলসে উদ্ধারকারী দল এবং জরুরি বিভাগের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন, তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।
সার্ফ লাইফ সেভিং NSW-এর প্রধান নির্বাহী স্টিভেন পিয়ার্স জানিয়েছেন, ছুটির দিনগুলোতে সৈকতে আসা মানুষের সুরক্ষায় তারা বহুবার উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন।
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইস্টার উইকেন্ডে আমরা এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আগে দেখিনি।
এই ঘটনার পাশাপাশি, নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ভিক্টোরিয়া রাজ্যে আরও কয়েকজন নিখোঁজ হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন ২৪ বছর বয়সী যুবক সিডনির লিটল বে-তে বিশাল ঢেউয়ের কারণে এবং অপরজন ভিক্টোরিয়ার সান রেমোর কাছে সমুদ্রের ধারে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ হন।
জানা গেছে, সান রেমোর কাছে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিটি চীনের নাগরিক ছিলেন। তার সাথে থাকা কয়েকজনের মধ্যে একজন নারীও ঢেউয়ের কারণে পানিতে পড়ে যান, পরে তার মৃত্যু হয়।
ভিক্টোরিয়া পুলিশ এখনও নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
এছাড়াও, রবিবার সিডনির রয়্যাল ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত ওয়াটামোলাতে মাছ ধরতে যাওয়া দুজন ব্যক্তিও পাথরের উপর থেকে পড়ে যান। তাদের মধ্যে একজনকে উদ্ধার করা গেলেও, অন্যজনের মৃত্যু হয়।
শুক্রবার ওলংগং হারবারে ৫৪ বছর বয়সী এক জেলে এবং সিডনির উত্তর দিকের শহরতলির একটি স্থানে আরও একজন মারা যান।
কর্তৃপক্ষ জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ছুটির দিনগুলোতে সমুদ্র এবং জলের কাছাকাছি যাওয়ার সময় যেন সবাই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ শোক প্রকাশ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি সকলকে জলের কাছাকাছি যাওয়া এবং বিশেষ করে শিশুদের প্রতি খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
রয়্যাল লাইফ সেভিং অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জাস্টিন কার বলেছেন, “এই দুঃখজনক ঘটনাগুলো এমন সময়ে ঘটেছে যখন আবহাওয়া প্রতিকূল ছিল এবং মানুষ প্রায়শই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছে।”
এর মধ্যে ছিল পাথুরে স্থানে হাঁটাচলা করা, সমুদ্রের কাছাকাছি ছবি তোলার চেষ্টা করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ায় মাছ ধরা।
প্রতি বছর ইস্টার উইকেন্ডে গড়ে ছয়জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এই ঘটনাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সমুদ্র বা নদীর কাছাকাছি যাওয়া এবং সাঁতার কাটার সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান