যুক্তরাজ্যের অনেক সংসদ সদস্য (এমপি) তাদের মূল কাজের বাইরে অন্য পেশায়ও সময় দিচ্ছেন, যা নিয়ে বর্তমানে বিতর্ক চলছে। সম্প্রতি ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বেশ কয়েকজন এমপি সপ্তাহে অন্তত এক দিন বা তার বেশি সময় অন্যান্য কাজে ব্যয় করছেন।
এই অতিরিক্ত কাজের মধ্যে রয়েছে টিভি উপস্থাপনা, আইন পেশা এবং পরামর্শকের মতো কাজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শুরু থেকে সাত জন এমপি তাদের দ্বিতীয় পেশায় গড়ে প্রতি সপ্তাহে আট ঘণ্টা করে সময় দিয়েছেন। সব মিলিয়ে তাদের এই সময়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ঘণ্টার বেশি।
এছাড়া, আরও সাত জন এমপি সপ্তাহে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা করে দ্বিতীয় কোনো কাজ করছেন।
রিফর্ম ইউকে পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ অতিরিক্ত কাজ করে এমপিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, টিভি উপস্থাপক, মিডিয়া বিশ্লেষক, বক্তা, সাংবাদিক, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে কাজ করেন।
ফারাজ বর্তমানে সপ্তাহে প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময় দেন এই কাজগুলোতে। তবে, পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে তার উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়।
পাবলিক হুইপের হিসাব অনুযায়ী, তিনি পার্লামেন্টের মোট ভোটের এক-তৃতীয়াংশে ভোট দিয়েছেন, যেখানে অন্য এমপিদের গড় উপস্থিতি ছিল ৭২ শতাংশ।
অন্যদিকে, কনজারভেটিভ এমপি জর্জ ফ্রিম্যান গত জুলাই মাস থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে সপ্তাহে প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা কাজ করেছেন।
তিনি জানান, মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি সপ্তাহে প্রায় ৬০ ঘণ্টা কাজ করতেন, যেখানে বর্তমানে বাইরের কাজ তার সময়ের সামান্য অংশ।
ফ্রিম্যান আরও বলেন, “আমাদের পার্লামেন্ট সবসময়ই এমপিদের বাইরের অভিজ্ঞতাকে উৎসাহিত করে, সেটা ডাক্তার, নার্স, ট্রেড ইউনিয়ন অথবা আমার মতো বিজ্ঞান বিষয়ক স্টার্টআপের সঙ্গে যুক্ত হওয়া— যেটাই হোক না কেন।
আমার বাইরের কাজ আমার নির্বাচনী এলাকার এমপি হিসেবে আমার কাজকে কোনোভাবেই খাটো করে না, যেখানে আমি সপ্তাহে প্রায় ৭০ ঘণ্টা কাজ করি।”
রিফর্ম ইউকে-এর এমপি লি অ্যান্ডারসন জিবি নিউজে উপস্থাপক ও কন্ট্রিবিউটর হিসেবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার মাধ্যমে সপ্তাহে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করেন।
কনজারভেটিভ এমপি জিওফ্রে কক্স কেসি গত জুলাই মাস থেকে আইন পেশায় সপ্তাহে ৯ ঘণ্টা ২২ মিনিটের মতো সময় দিয়েছেন।
এছাড়া, একই দলের জন হেইস অধ্যাপক, কলামিস্ট ও কৌশলগত উপদেষ্টা হিসেবে সপ্তাহে প্রায় ৯ ঘণ্টা কাজ করেন।
লেবার পার্টির এমপি জেমস নাইশও সপ্তাহে প্রায় ৯ ঘণ্টা সময় অন্য কাজে দেন, তবে আগস্ট মাসের শেষে তিনি একটি সম্পত্তি বিক্রয় কোম্পানির পরিচালক পদ থেকে তার সময় কমিয়ে আনেন।
এছাড়া, ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির কার্লা লকহার্ট প্রতি সপ্তাহে তার খামারে আট ঘণ্টা কাজ করেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পার্লামেন্টের শুরু থেকে এমপিরা বিভিন্ন কাজের জন্য যে অর্থ পেয়েছেন, তার হিসাব করা হয়েছে।
সেই হিসেবে, প্রায় ২৩৬ জন এমপি তাদের দ্বিতীয় কাজ থেকে আয় করেছেন এবং সব মিলিয়ে তারা প্রায় ৩২,০০০ ঘণ্টা কাজ করেছেন।
এর মধ্যে ১০৫ জন এমপি নিয়মিতভাবে বেতনভুক্ত কোনো কাজ করেছেন এবং ১৬৪ জন এমপি বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট কিছু কাজের জন্য অর্থ পেয়েছেন।
লেবার পার্টি আগে দ্বিতীয় কোনো পেশা নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বর্তমানে তারা তাদের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করেছে এবং পরামর্শক বা উপদেষ্টা পদে কাজের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
এই ধরনের ঘটনাগুলো জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছতা এবং তাদের কাজের প্রতি মনোযোগের বিষয়টি নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান