খেলাধুলায় মানসিক চাপ: আবেগ প্রকাশ নাকি নিয়ন্ত্রণে সাফল্য?
খেলাধুলায় মানসিক চাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে গভীর প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি, খেলাধুলা বিষয়ক মনোবিজ্ঞানীরা আবেগ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
অনেক সময় দেখা যায়, কিছু খেলোয়াড় তাদের আবেগ প্রকাশ করে ভালো খেলেন, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে মানসিক নিয়ন্ত্রণ সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়ায়।
এই প্রসঙ্গে, টেনিস কিংবদন্তি জন ম্যাকেনরোর উদাহরণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৮১ সালের উইম্বলডন ম্যাচে আম্পায়ারের সঙ্গে তীব্র বিতর্কে জড়িয়েও তিনি জয়লাভ করেন।
আবার, রজার ফেদেরারের মতো খেলোয়াড় শুরুতে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও, পরে মনোবিদের পরামর্শে মানসিক পরিপক্কতা অর্জন করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আবেগ প্রকাশ করা সব খেলোয়াড়ের জন্য ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। উলফহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক অ্যান্ড্রু লেন বলেন, “বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের জন্য, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তা পারফরম্যান্সের ক্ষতি করে।”
সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোও এর প্রমাণ দেয়। স্প্যানিশ লিগের শীর্ষস্থানীয় ভলিবল খেলোয়াড়দের ওপর পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, দুর্বল আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সকে কমিয়ে দেয়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিভাগের খেলোয়াড়রা ঝুঁকি নিতে বেশি আগ্রহী ছিল এবং তাদের ভুলের সংখ্যাও বেশি ছিল।
নারীদের মধ্যে নেতিবাচক আবেগ দ্রুত কাজ করার প্রবণতা দেখা যায়, যা তাদের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে।
মানসিক চাপ মোকাবেলার কৌশল হিসেবে, খেলোয়াড়দের খেলার গুরুত্ব কমিয়ে আনা, বিরতি নেওয়া এবং পরিস্থিতি পুনরায় মূল্যায়নের মতো পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
অধ্যাপক লেন মনে করেন, “আবেগ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা অন্যান্য যে কোনও দক্ষতার মতোই অনুশীলন করে অর্জন করা যায়।” তিনি খেলোয়াড়দের ঘটনার ভিডিও বিশ্লেষণ করে, পরিস্থিতিগুলো থেকে শিক্ষা নিতে উৎসাহিত করেন।
তবে, কিছু খেলোয়াড় আছেন যারা ইতিবাচক আবেগ ব্যবহার করে দর্শকদের সমর্থন আদায় করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, উসাইন বোল্ট এবং সেরেনা উইলিয়ামসের কথা বলা যেতে পারে।
অধ্যাপক লেন আরও উল্লেখ করেন, “রাগ দেখালে সাধারণত দর্শকদের সমর্থন পাওয়া যায় না।”
সুতরাং, খেলাধুলায় সাফল্যের জন্য আবেগ নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানসিক দৃঢ়তা শুধু খেলোয়াড়ের ভাবমূর্তি নয়, বরং এটি একটি মানসিক দক্ষতা এবং প্রতিযোগিতামূলক বুদ্ধিমত্তারও প্রতীক।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান