গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় বিপর্যস্ত শিল্পী ও তাঁদের শিল্পকর্ম।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় যখন জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, তখন সেখানকার শিল্পীরা তাঁদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরছেন যুদ্ধের বিভীষিকা। তাঁরা যেন এক একটি চিৎকার, যা বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য চাইছে।
সম্প্রতি জর্ডানের আম্মানে ‘দারাত আল ফুনুন’ গ্যালারিতে ‘আগুনের নিচে’ শীর্ষক এক প্রদর্শনীতে তাঁদের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। এই চারজন শিল্পী হলেন বাসেল আল মাকৌসি, সোহাইল সালেম, রায়েদ ইসা এবং মাজিদ শালা।
যুদ্ধের ভয়াবহতা আর ধ্বংসের মাঝেও তাঁরা তাঁদের শিল্পচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গাজার শিল্পী বাসেল আল মাকৌসি প্রতিদিন বেঁচে থাকাকে এক বিস্ময়কর ঘটনা মনে করেন। তাঁর কথায়, “যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জীবন যেন থেমে গেছে। কাজ নেই, শিল্পচর্চা নেই।
কেবল বোমা আর মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে বেড়াচ্ছি। খাবার আর পানির জন্য দ্রুত ছুটতে হয়, যেন দৌড়ানোই এখন আমাদের প্রধান কাজ।”
যুদ্ধ শুরুর আগে বাসেল আল মাকৌসি উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া এলাকার একজন শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে তিনি তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চান যে, ফিলিস্তিনিরা দখলদারত্বের শিকার এবং তাদেরও সম্মানের সঙ্গে বাঁচার অধিকার আছে।
তাঁর চারুকলার বিষয়বস্তু যুদ্ধের ভয়াবহতা। তিনি নারী, পুরুষ ও শিশুদের নিদারুণ যন্ত্রণা, শরণার্থী শিবিরের দৃশ্য ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন।
সোহাইল সালেম, যিনি আগে আল-আকসা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন, তাঁর কাজে যুদ্ধের বিভীষিকা আর মানুষের দুঃখগাঁথা ফুটিয়ে তোলেন। তিনি বলেন, “আমার মনের মধ্যে জমে থাকা কষ্টের দৃশ্যগুলো প্রকাশ করাই ছিল আমার লক্ষ্য।
বাস্তুচ্যুত মানুষের মরদেহ ডিঙিয়ে যাওয়ার সময় আমার কষ্ট হত। শরণার্থী শিবিরে মানুষের ভিড়, উচ্চ শব্দে রেডিওতে খবর শোনা—এসব থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে সকালে ছবি আঁকার চেষ্টা করতাম।”
রায়েদ ইসা তাঁর শিল্পকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পাচ্ছিলেন না। তাই তিনি ওষুধ কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করে ছবি আঁকতে শুরু করেন।
তাঁর ছবিতে দুর্ভিক্ষের কারণে গাজাবাসীর দুঃখ ফুটে উঠেছে। মাজিদ শালা, যিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেইর আল-বালাহ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন, তাঁর নিজের বাড়ি ও স্টুডিওর পাশাপাশি ৩০ বছরের শিল্পকর্মও হারিয়েছেন।
এই শিল্পীরা যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে শিশুদের জন্য নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করেন। বাসেল আল মাকৌসি শিশুদের জন্য “শিল্পকলা আবাস, বাস্তুচ্যুতি নয়” শীর্ষক কর্মশালা পরিচালনা করেন, যেখানে শিশুরা ছবি আঁকে এবং তাদের মায়েরা তা দেখে হাসেন।
‘দারাত আল ফুনুন’-এর আর্ট অ্যান্ড কালচার ডিরেক্টর খালেদ আল-বাশির বলেন, গাজার শিল্পীদের প্রতি সংহতি জানাতে এই প্রদর্শনী বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে গাজার শিল্পীদের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরা হয়েছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় শিল্পচর্চা চালিয়ে যাওয়া এই শিল্পীদের কাজ একদিকে যেমন তাঁদের টিকে থাকার লড়াই, তেমনই বিশ্ববাসীর কাছে ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-কষ্ট আর প্রতিরোধের এক জীবন্ত দলিল।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান