আন্দ্রোস দ্বীপ: গ্রিসের বুকে পায়ে হেঁটে প্রাচীন পথগুলির পুনরুজ্জীবন।
পর্যটকদের কাছে পায়ে হেঁটে ভ্রমণের আকর্ষণ বাড়ছে, আর সেই সুবাদে গ্রিসের আন্দ্রোস দ্বীপে চালু হয়েছে এক বিশেষ উদ্যোগ। এখানে, আগন্তুকরা কেবল সুন্দর দৃশ্যের সাক্ষী হবেন না, বরং প্রাচীন পথগুলির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণেও সহায়তা করতে পারবেন।
পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই দ্বীপ।
ভূমধ্যসাগরের বুকে অবস্থিত আন্দ্রোস দ্বীপ, যা আকারে বাংলাদেশের একটি জেলার কাছাকাছি। এখানে ‘আন্দ্রোস রুটস’ নামক একটি স্থানীয় সংগঠন কাজ করে চলেছে।
তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হল, দ্বীপের পুরনো পথগুলিকে পুনরুদ্ধার করা এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা। এই পথগুলি একসময় গাধা বা খচ্চরেরা ব্যবহার করত, তাই এদের ‘মুল ট্র্যাকস’ বলা হয়।
বর্তমানে, প্রায় ১৬০ কিলোমিটার পথ সংস্কার করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তা ২৪০ কিলোমিটারে প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই দ্বীপের আকর্ষণীয় দিক হল, এখানে আসা পর্যটকেরা ‘রাম্বল ওয়ার্ল্ডওয়াইড’-এর মাধ্যমে আট দিনের একটি বিশেষ ভ্রমণে অংশ নিতে পারেন।
এই ভ্রমণে, তাঁরা দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করেন, যা ওর্মোস করথিও থেকে শুরু হয়ে গ্যাভরিওতে শেষ হয়। পর্যটকদের থাকার জন্য সাধারণ মানের হোটেল এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মালপত্র পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
ইচ্ছেমতো, তাঁরা পুরো পথ হেঁটে অথবা ছোট ছোট অংশে বাস বা ট্যাক্সি ব্যবহার করে ভ্রমণ করতে পারেন।
ভ্রমণের সময়, পথ পরিষ্কার করা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজেও সাহায্য করা যায়। কেউ যদি চান, তাহলে গাছের ডালপালা কাটা বা পথের ধারে জমে থাকা আবর্জনা সরানোর মতো কাজ করতে পারেন।
এই কাজে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল সহায়তা করে, যাদের ‘অ্যাঞ্জেলস’ বা দেবদূত বলা হয়। মূলত মহিলারাই এই দলের সদস্য।
এই দ্বীপের নারীদের শক্তিশালী ঐতিহ্য রয়েছে, যারা একসময় পুরুষদের অনুপস্থিতিতে সংসারের হাল ধরে রাখতেন।
ভ্রমণের খরচ জনপ্রতি প্রায় ৭২৯ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায়, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী পাওয়া যাবে), যার মধ্যে থাকা-খাওয়ার খরচ, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার ব্যবস্থা, এবং রাফিনা থেকে আন্দ্রোস পর্যন্ত ফেরি ভাড়া অন্তর্ভুক্ত।
এই ভ্রমণ সাধারণত মে থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে হয়ে থাকে।
আন্দ্রোসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুবই মনোমুগ্ধকর। পর্যটকেরা এখানে মনোরম উপত্যকা, পুরনো গির্জা এবং জলপ্রপাত দেখতে পান।
এছাড়াও, স্থানীয় কুটিরশিল্পীদের তৈরি জিনিস কেনাকাটারও সুযোগ রয়েছে।
এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চান, আর পর্যটকদের অংশগ্রহণ তাঁদের সেই কাজে সহায়তা করে। এটি একটি সুন্দর উদাহরণ, যেখানে পর্যটন ও স্থানীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছে।
আন্দ্রোসের এই পদযাত্রা শুধু ভ্রমণের আনন্দ দেয় না, বরং পরিবেশ এবং স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেও শেখায়। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন এবং একই সঙ্গে স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে চান, তাঁদের জন্য আন্দ্রোস দ্বীপ হতে পারে এক আদর্শ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।