পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া, স্মরণীয় তাঁর মানবতাবাদী গুণাবলী।
বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করা হচ্ছে। ৮৮ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর প্রয়াণে শুধু ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মানুষজনই নন, বরং বিভিন্ন ধর্ম ও মতের অনুসারীরাও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর মানবিক গুণাবলী, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রতি সহমর্মিতা এবং পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
পোপ ফ্রান্সিসের উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল শরণার্থীদের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা। গ্রিসের লেসবস দ্বীপে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এছাড়াও, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। তিনি সবসময় সমাজের দুর্বল ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর এই মানবিক গুণাবলী বিশ্বজুড়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।
পোপ ফ্রান্সিসের সময়ে ভ্যাটিকানে এসেছিলেন এমন একজন জানান, পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাটা তাঁর জীবনের অন্যতম অভিজ্ঞতা। তিনি জানান, পোপ সকলের সঙ্গেই অত্যন্ত আন্তরিকভাবে মিশতেন এবং তাদের কথা মন দিয়ে শুনতেন।
বিভিন্ন দেশের মানুষ পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে তাঁদের স্মৃতিচারণ করেছেন। কেউ বলেছেন, তিনি ছিলেন একজন অনুপ্রেরণা, যিনি মানুষকে ভালো কাজের পথে উৎসাহিত করতেন। আবার কারও মতে, তিনি ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সবসময় লড়ে গেছেন।
তাঁর সময়ে, ক্যাথলিক চার্চে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছিল, যা অনেককে নতুন করে এই ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। এমনকি যারা আগে এই ধর্ম থেকে দূরে ছিলেন, তারাও পোপ ফ্রান্সিসের মানবিক দিকগুলো দেখে নতুন করে কাছে এসেছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিস শুধু একজন ধর্মগুরু ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সবসময় সোচ্চার ছিলেন।
দক্ষিণ সুদানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি যে ভূমিকা রেখেছিলেন, তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শান্তি আলোচনার জন্য তিনি সেখানে গিয়েছিলেন এবং সকলের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন, যা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তা দেয়।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর এখন নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই প্রক্রিয়াকে ‘কনক্লেভ’ বলা হয়। নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য কার্ডিনালরা মিলিত হবেন এবং তাঁদের ভোটের মাধ্যমে নতুন ধর্মগুরু নির্বাচিত করা হবে।
অনেকের মতে, নতুন পোপ নির্বাচনে বিভিন্ন দেশের প্রভাব থাকতে পারে। তবে সকলের প্রত্যাশা, নতুন পোপও যেন পোপ ফ্রান্সিসের মতোই মানবতাবাদী এবং সকলের প্রতি সহানুভূতিশীল হন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান