পোষা প্রাণী: সুস্থ হৃদয়ের জন্য এক দারুণ বন্ধু?
আজকাল অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে একটি পোষা প্রাণী রাখতে ভালোবাসেন। কুকুর, বিড়াল কিংবা অন্যান্য পাখি—এরা শুধু আনন্দই দেয় না, বরং আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সম্প্রতি গবেষণা বলছে, পোষা প্রাণী আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মানসিক চাপ কমায়
পোষা প্রাণীর সান্নিধ্য আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (National Institutes of Health)-এর মতে, একটি পোষা প্রাণী থাকলে মানসিক চাপ কমে এবং শরীরে কর্টিসলের মাত্রা হ্রাস হয়।
কর্টিসল হলো এমন একটি হরমোন যা মানসিক চাপের সময় আমাদের শরীরে তৈরি হয়। এই হরমোনের উচ্চ মাত্রা উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের কারণ হতে পারে।
পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটানো আমাদের শান্ত করতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পোষা প্রাণী রাখেন, তাদের হৃদস্পন্দন অন্যদের চেয়ে কম থাকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
পোষা প্রাণী, বিশেষ করে বিড়াল এবং কুকুর, আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিড়াল পোষেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি যারা পোষেন না তাদের চেয়ে ৪২ শতাংশ কম।
অন্যদিকে, কুকুর রয়েছে এমন মানুষের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি ৩১ শতাংশ পর্যন্ত কম হতে দেখা গেছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, পোষা প্রাণীর সাথে সরাসরি যোগাযোগের সময়, যেমন তাদের আদর করা বা কাছাকাছি থাকা, রক্তচাপের ওপর বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ায়
পোষা প্রাণী আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক কার্যকলাপের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা কুকুর পোষেন, তারা নিয়মিত তাদের সাথে হাঁটতে বের হন।
২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কুকুর মালিকরা অন্যদের চেয়ে গড়ে ২২ মিনিট বেশি সময় হাঁটেন। এছাড়াও, তারা বসে কাটানো সময়ও কমিয়ে দেন।
২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কুকুর মালিকরা প্রতি সপ্তাহে শারীরিক কার্যকলাপের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা (১৫০ মিনিট) পূরণ করার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে চার গুণ বেশি। নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলে
পোষা প্রাণী শুধু আমাদের সক্রিয়ই রাখে না, বরং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরিতেও সহায়তা করে। ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণী রয়েছে এমন ব্যক্তিরা তাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বেশি সচেতন হন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করেন।
হয়তো নিজের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরির পাশাপাশি তারা তাদের পোষা প্রাণীর খাদ্যাভ্যাস নিয়েও সচেতন থাকেন।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণী হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা কুকুর পোষেন, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত কম থাকে।
এছাড়াও, কোনো ধরনের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকিও ৩১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
তাহলে, পোষা প্রাণী কি সত্যিই আমাদের হৃদরোগ থেকে বাঁচাতে পারে?
অবশ্যই, পোষা প্রাণী আমাদের মানসিক চাপ কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শারীরিক কার্যকলাপ বাড়াতে সহায়তা করে। তবে, শুধুমাত্র হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য কোনো প্রাণী পোষা উচিত নয়।
পোষা প্রাণী মানেই একটি প্রাণের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ব। তাই, একটি পোষা প্রাণী নেওয়ার আগে এর ভালো-মন্দ দুটো দিক সম্পর্কেই ভালোভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন