সুদানের দারফুরে অবস্থিত জামজাম শরণার্থী শিবিরে আরএসএফ-এর নৃশংস হামলা, মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে, দারফুর অঞ্চলের জামজাম শরণার্থী শিবিরে প্যারামিলিটারি বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর চালানো ভয়াবহ হামলার খবর পাওয়া গেছে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে সংঘটিত এই হামলায় পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ড. ইব্রাহিম আব্দুল্লাহ আল জাজিরাকে টেলিফোনে জানান, মরদেহগুলো দ্রুত দাফন করার কারণে মৃতের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
জামজাম ক্যাম্পটি উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে মূলত ২০০৩ সাল থেকে দারফুর সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষজন আশ্রয় নিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সুদানে আরএসএফ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে এই ক্যাম্পের জনসংখ্যা আরও বেড়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আরএসএফ সদস্যরা ভারী অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে বহু মানুষ নিহত হয় এবং অনেকে আহত হয়। হামলাকারীরা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাট করে। জীবন বাঁচাতে মানুষজন দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে আরএসএফ এই ক্যাম্পটিকে তাদের সামরিক ঘাঁটি হিসেবে দাবি করলেও, বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষজন এটিকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। তাদের মতে, এটি ছিল কেবল অসহায় উদ্বাস্তুদের একটি আশ্রয়স্থল, যেখানে তারা জীবন ধারণের জন্য সংগ্রাম করছিল। আরএসএফ-এর হামলায় আহত একজন মুখপাত্র মোহাম্মদ খামিস জানিয়েছেন, গত পাঁচ মাসে ক্যাম্পটিতে ২৮ বারের বেশি হামলা হয়েছে, তবে এবারের মতো ভয়াবহতা আগে দেখা যায়নি।
হামলার শিকার হওয়া এক নারীর ভাষ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে তার পরিবার ওয়াদি শাদরা থেকে এসে জামজামে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু সেখানেও তারা আরএসএফ-এর আক্রমণের শিকার হয়। জীবন বাঁচাতে তারা এল-ফাশেরের দিকে পালিয়ে যায়।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী নাসর জানান, আরএসএফ সদস্যরা তাদের শহর দখলের পর পরিবার নিয়ে পালিয়ে জামজামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে তারা একটি অস্থায়ী ঘর তৈরি করে নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু আরএসএফের আক্রমণে তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়। নাসর আরও বলেন, “এই পৃথিবীতে একটি গাছের দাম আমাদের চেয়ে বেশি।”
এছাড়াও, হামলাকারীরা নারী ও শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মোহাম্মদ খামিসের মতে, অন্তত ২০০ জনের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
বর্তমানে জামজামের বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকে দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো উদ্বাস্তু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা