1. rajubdnews@gmail.com : adminb :
  2. babu.repoter@gmail.com : Babu : Nurul Huda Babu
May 30, 2025 4:42 PM

আতঙ্কের সমুদ্রে ঝাঁপ: কিশোরীর দুঃসাহসিক সাঁতারে হাজারো জেলিফিশের হুল!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট হয়েছে : Wednesday, April 30, 2025,

মার্কিন কিশোরী মায়া মেরহিগে, বয়স মাত্র সতেরো, নিউজিল্যান্ডের কুক প্রণালী সাঁতরে পার হয়ে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। ১৪ ঘণ্টার এক অবিরাম সাঁতারে জেলিফিশের হাজারো হুলের যন্ত্রণা সহ্য করে তিনি প্রমাণ করেছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে মানুষ কিসের না পারে!

এই সাঁতার ছিল তার ‘ওশেন সেভেন’ সম্পন্ন করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ‘ওশেন সেভেন’ হলো বিশ্বের কঠিনতম সাতটি উন্মুক্ত সমুদ্র সাঁতারের সমন্বয়ে গঠিত একটি চ্যালেঞ্জ। মায়া যদি এই চ্যালেঞ্জ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেন, তাহলে তিনি হবেন এই কীর্তি গড়া সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি।

ক্যালিফোর্নিয়ার এই কিশোরীর কুক প্রণালী পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ঙ্কর সুন্দর। সাঁতারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অসংখ্য জেলিফিশ তাকে হুল ফুটিয়ে যাচ্ছিল। প্রতি মিনিটে প্রায় ২৫ বার, অর্থাৎ প্রতি তৃতীয় স্ট্রোকেই তার শরীরে হুলের আঁচড় লাগছিল।

মায়ার কথায়, “আমি আসলে জেলিফিশকে খুব ভয় পাই। পানিতে নামার আগে থেকেই আমার মনে হচ্ছিল, ‘আমি খুব ভীত, জেলিফিশ দেখতে চাই না’। কিন্তু মনের ভেতরের এই ভীতিকে জয় করেই আমাকে এগিয়ে যেতে হয়েছে।”

কুক প্রণালী পাড়ি দেওয়ার আগে মায়া হাওয়াইয়ের মোলোকাই চ্যানেল, ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলের ক্যাটালিনা চ্যানেল এবং ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যেকার ইংলিশ চ্যানেলও সাফল্যের সঙ্গে সাঁতরে পার হয়েছেন। বর্তমানে তার লক্ষ্য হলো আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মধ্যেকার নর্থ চ্যানেল, স্প্যান ও মরক্কোর মধ্যেকার জিব্রাল্টার প্রণালী এবং জাপানের সুগারু প্রণালী জয় করা।

২০২৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে এই সাতটি চ্যালেঞ্জ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন।

খোলা সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময়, ম্যারাথন সাঁতার ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী সাঁতারুদের বিশেষ পোশাক (ওয়েটস্যুট) পরার অনুমতি নেই। তাই মায়া সাঁতারের সময় সাধারণ পোশাক পরেছিলেন।

প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর একটি সাপোর্ট বোট থেকে খাবার গ্রহণ করতেন তিনি। প্রতিকূল সমুদ্র এবং তীব্র স্রোতের কারণে ১৩.৭ মাইলের পরিবর্তে তাকে সাঁতরাতে হয়েছে ২৭ মাইল। সাঁতারে ৭ ঘণ্টার বদলে সময় লেগেছে ১৪ ঘণ্টার বেশি।

জেলিফিশের হুল ফোটানোর যন্ত্রণা তো ছিলই, তার সাথে যুক্ত হয়েছিল মানসিক চাপ। যখন মনে হচ্ছিল, গন্তব্যের কাছাকাছি আসার কোনো চিহ্ন নেই, তখন তিনি হতাশ হয়ে পড়েন।

তবে মায়া হাল ছাড়েননি। তিনি মনে করেছিলেন, দূরত্বের হিসাব না করে সাঁতারে মনোযোগ দেওয়াটাই আসল। রাতে সাঁতার কাটার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মায়া বলেন, “যদি তাদের (জেলিফিশ) দেখতে না পাই, তাহলে আমি নিজেকে বলি, চোখের আড়াল তো মনেরও আড়াল। তারা তো নেই, তাই না?

তখন আমি এমনভাবে ভাবি যেন কিছুই হচ্ছে না, যা আমাকে কিছুটা হলেও শান্ত থাকতে সাহায্য করে।”

সাঁতারের সময় মায়া তার কষ্টের কথা ভুলে যান, যখন তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের কথা ভাবেন। তিনি বলেন, “হাসপাতালে এমন অনেক শিশু আছে যারা কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের মতো কঠিন চিকিৎসা নিচ্ছে।

তারা যদি পারে, তাহলে আমি কেন পারব না? আমি নিজেকে বারবার বলি, ‘এটা আমার চেয়ে অনেক বড় কিছু’। এই ভাবনা আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।” মায়া এরই মধ্যে ‘সুইম অ্যাক্রস আমেরিকা’র মাধ্যমে শিশুদের ক্যান্সার গবেষণার জন্য ১৩০,০০০ ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছেন।

সাঁতারের পাশাপাশি মায়া পড়াশোনাতেও বেশ মনোযোগী। তিনি প্রাক-মেডিকেল বিষয়ে পড়াশোনা করছেন এবং তার লক্ষ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের কোনো একটি ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া।

তিনি বলেন, “আমার পছন্দের কলেজগুলো সমুদ্রের ধারে নয়, তবে আমি সেখানে লেক বা নদী খুঁজে নেব। সাঁতার আমার কাছে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা, যেখানে আমি নিজেকে খুঁজে পাই।”

গত বছর, মায়া তার প্যানক্রিয়াসে হওয়া একটি টিউমারের অস্ত্রোপচার করান। অস্ত্রোপচারের দুই সপ্তাহ পরেই তিনি আবার পানিতে ফিরে আসেন।

এরপর তিনি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন। মায়ার এই সাহস ও ইচ্ছাশক্তি সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2019 News 52 Bangla
Theme Customized BY RASHA IT