যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা— যা মূলত অবসর ও অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার জন্য—বিদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে আসা করের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। সম্প্রতি, অভিবাসন নীতি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী পদক্ষেপগুলো, যেমন অভিবাসীদের বিতাড়ন বা নতুন অভিবাসী আসা কমানোর চেষ্টা, সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজপত্রবিহীন শ্রমিকেরা এই তহবিলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ যোগ করেন। তারা নিয়মিতভাবে ট্যাক্স পরিশোধ করেন, যার মধ্যে একটি অংশ সামাজিক নিরাপত্তা কর হিসেবে জমা হয়। কিন্তু তারা এই সুবিধা সরাসরি পান না, কারণ তারা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন না।
ফলে তারা কার্যত এই তহবিলের জন্য অর্থ জোগানদাতা, কিন্তু সুবিধাভোগী নন।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীরা প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল, রাজ্য ও স্থানীয় কর হিসেবে পরিশোধ করেছেন। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার এবং স্বাস্থ্যখাতে ৬.৪ বিলিয়ন ডলার ছিল। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
তবে, অভিবাসন কমানোর নীতি গ্রহণ করলে সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, কম অভিবাসী আসলে এই খাতে অর্থের জোগান কমে যাবে।
অন্যদিকে, যারা বৈধভাবে কাজ করছেন বা করতে এসেছেন, তাদের অনেকে এই তহবিলে নিয়মিতভাবে অবদান রাখছেন। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর প্রকাশিত একটি সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অভিবাসীদের আগমন সামাজিক নিরাপত্তা রাজস্বে ২০২৪ থেকে ২০৩৪ সালের মধ্যে প্রায় ৩৪৮ বিলিয়ন ডলার যোগ করবে। একই সময়ে, তারা সম্ভবত ১ বিলিয়ন ডলারের মতো সুবিধা গ্রহণ করবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিবাসন নীতি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। যদি অভিবাসন কমে যায়, তাহলে তহবিলের ঘাটতি বাড়তে পারে। আবার, অভিবাসন বাড়লে তা এই ঘাটতি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
তবে, কেউ কেউ মনে করেন, এই প্রভাব খুব বেশি নয়। তাঁদের মতে, অভিবাসন বাড়ানো বা কমানোর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলের ওপর বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে না।
সামগ্রিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা অভিবাসন নীতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। অভিবাসীদের করের অবদান এই ব্যবস্থার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যদিও তাঁরা সরাসরি সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন।
ভবিষ্যতে অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন আসলে এই ব্যবস্থার ওপর তার প্রভাব কেমন হবে, তা এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন