মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক একটি জটিলতা : জীবিত মানুষ, যাদেরকে ঘোষণা করা হচ্ছে মৃত!
যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসন (Social Security Administration) বর্তমানে তাদের ডেটাবেজে বড় ধরনের ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে। জানা গেছে, এই সিস্টেমে জীবিত অনেক মানুষকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখন উদ্বেগে পড়েছেন দেশটির নাগরিকরা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যুর খবর নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে ০.৩৩ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে জীবিত মানুষকে মৃত ঘোষণা করার ভুল হচ্ছে।
এই ঘটনার পেছনে কাজ করছে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (Department of Government Efficiency) নামক একটি বিভাগ। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল, মৃত ব্যক্তিদের নামে হওয়া ভুয়া সুবিধাগুলি চিহ্নিত করা। তবে এই কার্যক্রমের ফলস্বরূপ, অনেক জীবিত মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তাদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে এখন নানান ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জীবিত প্রমাণ করার জন্য তাদের ছুটতে হচ্ছে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে।
এই ভুলের শিকার হওয়া একজন হলেন জর্জিয়ার বাসিন্দা জন রিড তৃতীয়। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। এপ্রিল মাসে তিনি জানতে পারেন, তার স্বাস্থ্য বীমা প্রদানকারী সংস্থা তার পরিবারের প্রতি শোকবার্তা পাঠিয়েছে।
এরপর সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসন থেকে তার উত্তরাধিকারী কে, সেই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এমনকী, তার ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী সংস্থা আমেরিকান এক্সপ্রেসও তার হিসাব নিষ্পত্তির জন্য যোগাযোগ করতে বলে।
রিড জানান, তিনি জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর নিজের পরিচয় প্রমাণ করতে তাকে স্থানীয় অফিসে কয়েকবার যেতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংক এবং স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানির সঙ্গেও তাকে কয়েক ঘণ্টা ধরে ফোনে কথা বলতে হয়েছে।
বর্তমানে, তিনি তার প্রাপ্য ৬,৫০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৭ লক্ষ ১৪ হাজার বাংলাদেশি টাকা) সামাজিক নিরাপত্তা এবং পেনশন পাননি। যার ফলে তার সংসার বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে।
সিয়াটলের বাসিন্দা নেড জনসন-ও একই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন। তাকেও মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে প্রায় আট ঘণ্টা সময় ব্যয় করে, তিনি প্রমাণ করেন যে তিনি জীবিত আছেন। এরপর তার সুযোগ-সুবিধাগুলো আবার ফিরে আসে।
শুধু সাধারণ নাগরিক নন, এই সমস্যায় পড়েছেন অভিবাসীরাও। যুক্তরাষ্ট্রের ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ’ (Department of Homeland Security) কিছু অভিবাসীর নাম ডেটাবেজে মৃত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছে।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, অভিবাসীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মতে, এই ধরনের ভুলের কারণে অফিসের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের মতে, কর্মীদের এখন জীবিত ব্যক্তিদের ডেটা সংশোধনের জন্য বেশি সময় দিতে হচ্ছে, যা অন্যান্য জরুরি কাজকে ব্যাহত করছে।
সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় তারা এই ধরনের ভুলগুলো কিভাবে শুধরানো যায়, সে বিষয়ে ধারণা দিয়ে থাকেন। এছাড়া, কোনো ভুল হয়ে গেলে তা সংশোধনের জন্য তাদের একটি প্রক্রিয়াও রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন