দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণের ঘটনা বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একদল শ্বেতাঙ্গ নাগরিক, যারা মূলত ডাচ উপনিবেশ স্থাপনকারীদের বংশধর, বর্ণবাদের অভিযোগ তুলে ট্রাম্প প্রশাসনের আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
তাদের দাবি, দক্ষিণ আফ্রিকায় তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং জীবন ধারণের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জোহানেসবার্গ থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে কয়েক ডজন আফ্রিকান নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বয়স্ক থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্মের মানুষজন।
তাদের অনেকের সঙ্গেই ছিল বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। তারা সবাই যেন এক নতুন জীবনের সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছেন।
আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত লিম্পোপো প্রদেশের একটি খামারের মালিক, ৪৬ বছর বয়সী চার্লস ক্লিনহাউস-এর শরণার্থী হওয়ার আবেদন ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি জানান, তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
যদিও, ঠিক কবে বা কখন এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এবং বিশেষজ্ঞরা এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে, শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের ওপর কোনো সুনির্দিষ্ট হামলা বা ভূমি দখলের ঘটনা ঘটেনি।
বরং, তারা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এই বিষয়ে বলেন, “যারা দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন, তারা সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে স্বাগত জানাতে চান না।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি নিশ্চিত, তারা খুব শীঘ্রই আবার ফিরে আসবেন, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার মতো সুন্দর দেশ আর নেই।”
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। তিনি তাদের ‘নিপীড়িত’ এবং ‘নিজেদের ভূমি থেকে বিতাড়িত’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তবে, দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা ট্রাম্পের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মতে, শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন এবং সাধারণ অপরাধের অংশ।
শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া এই আফ্রিকানদের অনেকেই টেক্সাস, নিউ ইয়র্ক, এবং অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে বসবাস শুরু করেছেন। সেখানে তারা মার্কিন সরকারের সহায়তায় কাজ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তাদের শরণার্থী হিসেবে এক বছর থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যার পরে তারা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য গ্রিন কার্ডের আবেদন করতে পারবেন।
তবে, দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক নাগরিক মনে করেন, এই ঘটনার পেছনে শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের মধ্যে থাকা কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হাত রয়েছে। তাদের অভিযোগ, এইসব গোষ্ঠী এখনো তাদের বিশেষ অধিকার বজায় রাখতে চায়, যা নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেক্ষাপটে সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকার জটিল ইতিহাস এবং বর্তমানের সামাজিক পরিবর্তনের একটি প্রতিচ্ছবি। শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য, ভূমি সংস্কারের মতো বিষয়গুলো এখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।