যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন ডেমোক্র্যাটরা। তাদের প্রধান অভিযোগ, ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু কাজ করেছেন যা নৈতিকতার পরিপন্থী এবং এতে তার স্বার্থের সংঘাত ঘটেছে।
খবর অনুযায়ী, ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, ট্রাম্প কাতার থেকে একটি বিলাসবহুল বিমান গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি “মিম কয়েন”-এর সাথে তার যুক্ততা রয়েছে, যা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ট্রাম্পের এই বিষয়গুলো। ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, ট্রাম্প সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের কিছু নিয়ম লঙ্ঘন করছেন।
বিশেষ করে, বিদেশি সরকার থেকে উপহার গ্রহণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে সংবিধানে, যা তিনি মানছেন না।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান পার্টি ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে এইসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের মতে, ডেমোক্র্যাটরা এটা করছেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য।
তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করা। তবে, এই বিতর্কের মাঝে কিছু রিপাবলিকানও ট্রাম্পের সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নিজের হোটেল ব্যবহার করেছেন। এবারও, তার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার সম্ভবনা দেখা দেওয়ায়, এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তারা মনে করেন, ট্রাম্প সম্ভবত নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সম্পদ বাড়াতে চাইছেন।
ট্রাম্পের পরিবারের জন্য গত ১১৪ দিন ছিল সবচেয়ে লাভজনক সময়, যেখানে সাধারণ আমেরিকান পরিবারগুলো একের পর এক খারাপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।”
ডেমোক্র্যাটরা মনে করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্যকে জনগণের কাছে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে। তারা চান, সাধারণ মানুষ যেন বুঝতে পারে, কিভাবে ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানরা তাদের নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করছেন।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান কৌশলবিদ ম্যাট গোরম্যানের মতে, ডেমোক্র্যাটদের উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগ আসলে একটি ‘আলোচনা তৈরির কৌশল’। তার মতে, এই ধরনের বিষয় সাধারণ মানুষের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি (DNC) ফ্লোরিডার পাম বিচে একটি ব্যানার উড়ায়, যেখানে কাতার থেকে বিমানের উপহার এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ার কেন মার্টিন এক বিবৃতিতে বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদকে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহার করছেন, যেখানে সাধারণ পরিবারগুলো টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে।”
ডেমোক্র্যাটরা এখন এই বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছেন। তারা চান, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা হোক।
এরই মধ্যে, সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার কাতারের দেওয়া বিমানের বিষয়টিকে ‘নগ্ন দুর্নীতি’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে, ডেমোক্র্যাটরা ইতোমধ্যেই আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন, যাতে কোনো প্রেসিডেন্ট বা কংগ্রেস সদস্য ‘মিম কয়েন’ ইস্যু করতে না পারেন।
সেনেটর ক্রিস মারফি এই বিষয়ে বলেন, ট্রাম্পের এই কাজ ‘যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের করা সবচেয়ে অনৈতিক এবং দুর্নীতিপূর্ণ কাজ’।
এই বিতর্কের মধ্যে, অনেকেই মনে করছেন, ডেমোক্র্যাটরা অতীতের মতো এবারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের প্রচারকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে সুবিধা পেতে চাইছেন।
অতীতেও দেখা গেছে, যখন ডেমোক্র্যাটরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, তখন তারা নির্বাচনে ভালো ফল করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন