মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্টেল ও গ্যাং সদস্যদের ‘শত্রু সেনা’ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সন্দেহভাজন কার্টেল এবং গ্যাং সদস্যদের আরও সহজে আটক করা এবং তাদের কারাবাসের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই সীমিত করার উদ্দেশ্যে, তাদের ‘শত্রু সেনা’ হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। একাধিক সূত্রের খবর অনুযায়ী, দেশটির কর্মকর্তারা এই বিষয়ে আলোচনা করছেন।
৯/১১-র সন্ত্রাসী হামলার পর, যুক্তরাষ্ট্র ‘শত্রু সেনা’ তকমা ব্যবহার করে তালেবান, আল-কায়েদা এবং তাদের সহযোগী জঙ্গিদের চিহ্নিত করেছিল। এই সংজ্ঞা ব্যবহার করে, অভিযুক্তদের বিচারের প্রক্রিয়া ছাড়াই গুয়ান্তানামো বে-র সামরিক কারাগারে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা হয়েছিল।
আলোচনায় উঠে আসা এই ধারণাটি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের মেয়াদের কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০১৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করা অভিবাসীদের একই ভাবে চিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন। তবে সেই সময়ে তৎকালীন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তারা এর বিরোধিতা করেছিলেন।
তাদের মতে, এটি একটি ‘ভুল পদক্ষেপ’ হত এবং এর মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের মতো অভিবাসীদের সঙ্গে ব্যবহার করা হলে তা ‘বেআইনি এবং পুলিশি শাসনের’ দিকে ঠেলে দিত।
বর্তমান আলোচনার সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এবার প্রশাসন বিশেষভাবে ট্রাম্প কর্তৃক চিহ্নিত আটটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিতে চাইছে। এর মধ্যে ‘ট্রেন দে আরুয়া’ এবং ‘এমএস-১৩’ গ্যাং উল্লেখযোগ্য।
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, “বিষয়টি মূলত তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার ওপর নির্ভরশীল।”
পেন্টাগন, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন প্রায়শই অভিবাসীদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করে। সম্প্রতি, ন্যাশনাল কাউন্টার টেরোরিজম সেন্টারের পরিচালক একটি পোস্টে জানিয়েছিলেন, প্রায় ৬০০ জন অভিবাসী, যাদের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগসূত্র ছিল, তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে এসেছেন এবং বাইডেন প্রশাসনের আমলে তাদের জামিন দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি এমএস-১৩, ট্রেন দে আরুয়া বা অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত বেশ কয়েকজন অভিবাসীকে তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক অস্বীকার করতে দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালত অনেক অভিবাসীর বহিষ্কার আটকে দেওয়ায় ট্রাম্প চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কারণ, তাদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া দেওয়া হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিবাসীদের ‘শত্রু সেনা’ হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে তাদের অধিকার সীমিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসীদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার এই ধারণাটি সহজ সমাধান নাও হতে পারে। তাদের মতে, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। কারণ, ‘শত্রু সেনা’ সংজ্ঞাটি শুধুমাত্র তালেবান, আল-কায়েদা এবং তাদের সহযোগী গোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য।
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ল সেন্টারের অধ্যাপক এবং সিএনএনের আইন বিশ্লেষক স্টিভ ভ্লাদেক বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা আইনের দুটি ভিন্ন বিষয়কে একত্রিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেখানে তাদের মধ্যেকার পার্থক্যগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে না। এখানে কোনো ভালো যুক্তির অবকাশ নেই।”
এমনকি এই ধরনের চিহ্নিতকরণ অভিবাসীদের ফেডারেল আদালতে তাদের আটকাদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করা থেকেও বিরত রাখতে পারবে না। যদিও সামরিক হেফাজতে থাকার কারণে এটি সামান্য জটিল হতে পারে।
প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরক্ষা বিভাগের আইনজীবী এবং বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ হিউস্টন ল সেন্টারের অধ্যাপক ক্রিস মিরাসোলা বলেন, “যদি তাদের শত্রু সেনা হিসেবে চিহ্নিত করাও হয়, তবুও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে তাদের আটকাদেশের বিরুদ্ধে আপত্তি জানানোর অধিকার থাকবে।”
তবে প্রতিরক্ষা বিভাগের সাবেক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রশাসন সম্ভবত চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, তারা দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের কার্টেল ও গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা এই বিষয়ে সামরিক শক্তি ব্যবহারের পক্ষে। এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বেসামরিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব নিতে পারে।
পেন্টাগনের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তারা মনে করছেন, এমএস-১৩ বা ট্রেন দে আরুয়ার মতো গোষ্ঠীর সদস্যদের ‘শত্রু সেনা’ হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব নাও হতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যদি কোনো ব্যক্তিকে শত্রু সেনা হিসেবে চিহ্নিত করে এল সালভাদরের মেগাপ্রিসন সেকোটে (CECOT)-এ পাঠানো হয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে শত শত গ্যাং ও কার্টেল সদস্যকে পাঠিয়েছে, তাহলে তাদের আটকাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ থাকবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট গুয়ান্তানামো বে-র আটককৃত ‘শত্রু সেনাদের’ আপিলের অধিকার দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের অন্য কোনো স্থানে আটককৃতদের ক্ষেত্রে এই অধিকার প্রযোজ্য কিনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন