ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যেই হামাস জানিয়েছে, তারা গাজায় আটক একজন আমেরিকান-ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে।
সোমবার গাজার জাবালিয়ায় একটি স্কুলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় নিহতদের মধ্যে পাঁচজন শিশু ও চারজন নারীও রয়েছে।
এছাড়া, বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বরাবরই বলে আসছে, তারা কেবল জঙ্গিদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
তবে তাদের হামলায় বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু হলে, ইসরায়েল এর জন্য হামাসকে দায়ী করে থাকে। কারণ হিসেবে তারা জানায়, হামাস যোদ্ধারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধ করে।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সপ্তাহে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করতে যাচ্ছেন। এমন একটি সময়ে ইসরায়েল গাজায় তাদের আক্রমণ তীব্র করেছে।
দুই মাস আগে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। এতে মানবিক সংকট আরও বাড়ছে।
খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েল অবরোধ তুলে না নিলে এবং সামরিক অভিযান বন্ধ না করলে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ জানিয়েছে, পরিস্থিতি পরিবর্তন না হলে দুর্ভিক্ষ একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি ‘মারাত্মক’ ক্ষুধার সম্মুখীন, যার অর্থ তারা অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া, আরও ১০ লাখ মানুষ ‘জরুরি’ খাদ্য সংকটে ভুগছে।
গত ১০ সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে খাদ্য, আশ্রয়, ওষুধ বা অন্য কোনো পণ্য প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এর মধ্যেই তারা গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালাচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জনের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দৈনিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহত ৯৪ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আরও চারজনের মরদেহ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮৬২ জন নিহত হয়েছে এবং ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ জন আহত হয়েছে।
মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার পর থেকে ২ হাজার ৭৪৯ জন নিহত এবং ৭ হাজার ৬০৭ জন আহত হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতাহতের শিকার বেসামরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না।
তাদের হিসাব অনুযায়ী, নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর কাছে ইসরায়েল তাদের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন করেছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, আদালত নভেম্বরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আইনি অধিকার রাখে না। তাদের দাবি, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট গাজায় যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী। যদিও ইসরায়েল আদালতের এখতিয়ারকে অস্বীকার করে।
অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে, তারা সোমবার গাজায় আটক একজন আমেরিকান-ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। তারা জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি শুভেচ্ছা হিসেবে তারা এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেবে।
আলেকজান্ডার একজন ইসরায়েলি সেনা সদস্য। তাকে গত বছরের ৭ অক্টোবর বন্দী করা হয়েছিল। আলেকজান্ডারের পরিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের ‘সবচেয়ে বড় উপহার’ পাওয়া গেছে।
তাদের ছেলে এডান ৫৮৩ দিন বন্দী থাকার পর বাড়ি ফিরছে। তারা ট্রাম্প প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং অন্যান্য জিম্মিদের মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইসরায়েলি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
তবে কিছু জিম্মির পরিবার এই মুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, আলেকজান্ডারের আমেরিকান নাগরিকত্বের কারণে তাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। তারা অন্যান্য জিম্মিদের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন।
হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে তারা এই মুক্তি দিচ্ছে। একইসঙ্গে তারা গাজায় প্রবেশপথ পুনরায় খোলা এবং অবরুদ্ধ অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহ করার চেষ্টা করছে।
হামাসের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি আশা করছেন। তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস