আকাশ পথে ভ্রমণের সময় মোবাইল ফোনের ‘এয়ারপ্লেন মোড’ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত আকাশ পথে ভ্রমণ করেন, তাদের মধ্যে এই বিষয়ে কৌতূহল দেখা যায়।
আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জানবো উড়োজাহাজে ‘এয়ারপ্লেন মোড’ চালু করার কারণ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে।
আসলে, উড়োজাহাজে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সিগন্যাল চালু থাকলে তা বিমানের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সংকেতের সঙ্গে সমস্যা তৈরি করতে পারে। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Federal Aviation Administration – FAA) সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তাই এই বিষয়ে কিছু নিয়মকানুন তৈরি করেছে।
শুরুতে, ১৯৯১ সালে ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (Federal Communications Commission – FCC) সিদ্ধান্ত নেয় যে উড়োজাহাজে মোবাইল ফোনের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হবে। এর কারণ ছিল, মোবাইল ফোনের সিগন্যাল বিমানের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতির কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
যদিও সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে, এবং বর্তমানে ‘এয়ারপ্লেন মোড’ চালু করার মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়েছে।
তাহলে, ‘এয়ারপ্লেন মোড’ চালু না করলে কি হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘এয়ারপ্লেন মোড’ চালু না করলে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, এর কিছু সম্ভাব্য অসুবিধা রয়েছে।
যেমন, মোবাইল ফোনের রেডিও তরঙ্গ ককপিটের (Cockpit) রেডিও তরঙ্গের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। এর ফলে পাইলটদের রেডিও যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে জরুরি অবতরণের সময়।
এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে এটি হেডসেটের মাধ্যমে আসা শব্দকে বিকৃত করতে পারে, যা পাইলটদের জন্য বেশ বিরক্তিকর হতে পারে।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union – EU) দেশগুলোতে এই নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। সেখানে কিছু ফ্লাইটে যাত্রীরা তাদের ফোন ব্যবহার করতে পারেন, এমনকি টেক্সট মেসেজ পাঠাতে বা কলও করতে পারেন।
এর কারণ হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় যা বিমানের ভেতরের নেটওয়ার্কের সঙ্গে মোবাইল ফোনের সিগন্যালের কোনো সমস্যা তৈরি করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) অবশ্য এখনো পর্যন্ত তাদের নিয়মকানুন পরিবর্তন করেনি। তাই, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকালে উড়োজাহাজের কর্মীদের নির্দেশ অনুযায়ী ‘এয়ারপ্লেন মোড’ চালু করাই ভালো।
‘এয়ারপ্লেন মোড’ চালু না করার কারণে কিছু ক্ষেত্রে যাত্রীদের জরিমানা করা হয়েছে। ২০১৬ সালে, একজন ব্রিটিশ যাত্রীকে ফ্লাইবে (Flybe) নামক একটি বিমান সংস্থার ফ্লাইটে নিয়ম ভাঙার জন্য ৬০০ ডলারের বেশি জরিমানা করা হয়েছিল।
এমনকি, নিয়ম না মানলে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সবশেষে, নিরাপদ ভ্রমণের জন্য উড়োজাহাজে আরোহণের সময় কর্মীদের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। ‘এয়ারপ্লেন মোড’ চালু করার মাধ্যমে আপনি একদিকে যেমন নিজের ফোনকে ব্যাটারি সাশ্রয়ী করতে পারেন, তেমনি বিমানের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারেন।
এছাড়াও, ভ্রমণের সময় বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের মতো সময় কাটানোটাও অনেক সময় আনন্দের হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ট্র্যাভেল অ্যান্ড লেজার