একটি জীবন বাঁচানোর লড়াই: অঙ্গ প্রতিস্থাপনে নতুন দিগন্তের সূচনা
অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সংকট আজ বিশ্বজুড়ে। প্রতি বছর, অসংখ্য মানুষ শুধু একটি সুস্থ অঙ্গের অভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। আর এই সংকট মোকাবিলার এক নতুন আশা দেখা যাচ্ছে – প্রাণীদেহ থেকে মানুষের শরীরে অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন।
সম্প্রতি, এই বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
১৯৫৪ সালে, প্রথমবারের মতো মানবদেহে সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। বোস্টনের পিটার বেন্ট বরিংহাম হাসপাতালে যোসেফ মারে-র নেতৃত্বে যমজ ভাই রোনাল্ড ও রিচার্ড হেরিকের মধ্যে এই প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়।
রিচার্ডের কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল এবং তার ভাই রোনাল্ড ছিলেন অঙ্গদাতা। সেই ঘটনার পর থেকে, অঙ্গ প্রতিস্থাপন জীবন বাঁচানোর এক গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
বর্তমানে, এক লক্ষেরও বেশি মানুষ শুধুমাত্র আমেরিকাতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছেন। এদের মধ্যে প্রতিদিন ১৭ জন মানুষ, অঙ্গের অভাবে মারা যান। এই পরিস্থিতিতে, বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণা জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন এর দিকে আরও বেশি করে আকৃষ্ট করছে।
জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন-এর ধারণা নতুন নয়। ১৯৭০ এর দশক থেকে মানুষের ভালভ প্রতিস্থাপনের জন্য শূকরের হৃদপিণ্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। ইনসুলিন এবং হেপারিন-এর মতো প্রয়োজনীয় ওষুধও শূকর থেকে তৈরি করা হয়।
মানুষের শরীরের আকারের সাথে শূকরের অঙ্গের মিল থাকায়, তাদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। এছাড়াও, শূকর খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে, যা চাহিদামতো অঙ্গ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক।
তবে, জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন-এর অগ্রগতি মূলত সম্ভব হয়েছে CRISPR এবং জিন প্রকৌশলের কারণে। বিজ্ঞানীরা এখন শূকরের ডিএনএ পরিবর্তন করতে পারেন, যাতে তাদের অঙ্গ মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য আরও উপযুক্ত হয় এবং প্রত্যাখ্যানের সম্ভাবনা কমানো যায়।
এই গবেষণায়, রোগীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সাহস এবং আগ্রহের ফলেই বিজ্ঞান এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। ৬৬ বছর বয়সী টিম অ্যান্ড্রুজ-এর কথা ধরা যাক।
দীর্ঘদিন ডায়ালাইসিসের পর, তিনি যখন জানতে পারলেন যে তার হাসপাতালে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের পরীক্ষা চলছে, তখন তিনি সেই সুযোগটি নিতে চাইলেন। যদিও ফলাফলের অনিশ্চয়তা ছিল, তবুও তিনি এগিয়ে যান।
টিমের মতোই, ৫৩ বছর বয়সী টাওয়ানা লুনিও এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ডায়ালাইসিসের পর, একটি শূকরের কিডনি গ্রহণ করেন।
যদিও শেষ পর্যন্ত সংক্রমণ এর কারণে তার কিডনি অপসারণ করতে হয়, কিন্তু এই ১৩০ দিন তিনি শূকরের কিডনি নিয়ে সুস্থ জীবন যাপন করেছেন। এই অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞানীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন, যা ভবিষ্যতে আরও কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরিতে সাহায্য করবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, এই ধরনের গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে, ডেভিড বেনেট, লরেন্স ফসেট, রিক স্লেম্যান এবং লিসা পিসানোর মতো রোগীদের অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞানীরা অনেক কিছু শিখছেন।
এই পরীক্ষার ফলস্বরূপ, অঙ্গ প্রতিস্থাপনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বেশি মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন