যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির প্রভাবশালী নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত হতে চাইছেন ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান সিনেটর জন কার্টিস। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যুতে সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর ভিন্নমত রয়েছে।
কার্টিসের মতে, ট্রাম্পের সাফল্য নিশ্চিত করতে হলে তাঁর ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়া জরুরি।
সিএনএন-এর সঙ্গে আলাপকালে সিনেটর কার্টিস বলেন, তিনি সীমান্ত নীতিসহ কিছু ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রশংসা করেন।
তবে ছোট ব্যবসার ওপর শুল্কের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব এবং কাতারের একটি জেট বিমান গ্রহণ করার পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
কার্টিস আরও মনে করেন, প্রশাসন যদি `হ্যাবিয়াস কর্পাস` স্থগিত করতে চায়, তাহলে এক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়া উচিত।
হ্যাবিয়াস কর্পাস হলো এমন একটি আইনি প্রক্রিয়া, যা মানুষকে আদালতের মাধ্যমে তাদের আটকাদেশ চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দেয়।
সিনেটর কার্টিস বলেন, “আমরা প্রেসিডেন্টের প্রতি সবচেয়ে ভালো কাজ করি, যখন আমরা একটি পরিচালনা পর্ষদের মতো কাজ করি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ প্রেসিডেন্টের প্রতিটি সিদ্ধান্তে সীলমোহর মারুক, তাই না?”
উল্লেখ্য, এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারে ভোট দেওয়ার কারণে মিট রমনিসহ অনেক রিপাবলিকান সিনেটরকে ট্রাম্পের সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে।
তবে কার্টিস মনে করেন, ভিন্নমত পোষণ করার কারণে দলের নেতার সমালোচনার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি চিন্তিত নন।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেননি কার্টিস।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ট্রাম্প আসলে সেসব মানুষের প্রতি সম্মান দেখান, যারা সঠিক সময়ে, সঠিক উপায়ে তাঁর সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি আরও যোগ করেন, “যদি আমি কোনো খারাপ মন্তব্য করি, তবে অবশ্যই তা ভালোভাবে নেওয়া হবে না। কিন্তু যদি আমি প্রশাসনকে আমার ভাবনাগুলো বুঝিয়ে বলি, তাহলে আমি আশা করি তিনি অবশ্যই সেটিকে গুরুত্ব দেবেন।”
ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর শুল্কের প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে কার্টিস বলেন, “আমাদের ছোট ব্যবসার বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।”
এছাড়া পরিবেশগত বিষয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ভিন্নমত রয়েছে।
কার্টিস মনে করেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁদের বন্ধু নন।
সিনেটর কার্টিস মনে করেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
এমনকি `হ্যাবিয়াস কর্পাস` স্থগিত করার মতো সিদ্ধান্তের আগে বিষয়টি নিয়ে সতর্কভাবে বিবেচনা করা দরকার।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে এয়ার ফোর্স ওয়ানের জন্য একটি বিলাসবহুল জেট বিমান গ্রহণ করার পরিকল্পনা নিয়ে কার্টিস নিজের মতামত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা হলো, বিতর্কিত বিষয়গুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।”
ফেডারেল ঘাটতি ব্যবস্থাপনার মতো কিছু ক্ষেত্রে কংগ্রেস তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন কার্টিস।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এই মুহূর্তে এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যা মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায়।
সিনেটর কার্টিস মনে করেন, রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পের এজেন্ডা নিয়ে একটি ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে পারবেন।
তবে তিনি দলটির অন্যদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সতর্ক করেছেন, কীভাবে বিলটি বাইডেন-এর জলবায়ু বিষয়ক কর ছাড়ের নিয়ম পরিবর্তন করবে।
ইউটাহর এই রিপাবলিকান প্রতিনিধি জানান, তরুণ ভোটারদের কাছে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব কতখানি, তা তিনি জানেন।
তিনি মনে করেন, এটি তাঁর দলের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে, কোনো বাধা নয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন