যুক্তরাষ্ট্রে শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে একটি নতুন আইন, যা ‘ডিপফেইক’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা বিকৃত ছবি তৈরি ও শেয়ার করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করবে।
এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো, অনলাইনে কারও সম্মতি ছাড়া তৈরি হওয়া নগ্ন বা আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করা হলে, ভুক্তভোগীদের আইনি সুরক্ষা দেওয়া এবং সেই ধরনের ছবি দ্রুত ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে ফেলতে প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোকে বাধ্য করা। খবরটি জানিয়েছে সিএনএন।
বর্তমানে, উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে যে কেউ কারও ছবি ব্যবহার করে, তার দেহে অন্য কারও নগ্ন ছবি বসিয়ে দিতে পারে। এই ধরনের ‘ডিপফেইক’ ছবি তৈরি করে তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে, যা ভুক্তভোগীদের জন্য মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ কিশোরী—অনেকেই এই ধরনের সাইবার-হয়রানির শিকার হয়েছেন।
নতুন আইনে শুধু কম্পিউটার-নির্মিত ছবিই নয়, আসল ছবি ব্যবহার করেও যদি কারও সম্মানহানি করা হয়, তবে সেটিও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
আইনটি পাস হওয়ার পর প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপত্তিকর ছবিগুলো তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া, ভুক্তভোগীদের সুরক্ষায় বিদ্যমান আইনগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই আইনটি মূলত সেই সব ভুক্তভোগীর জন্য তৈরি করা হয়েছে, যারা প্রতিশোধমূলক ছবি বা ‘রিভেঞ্জ পর্ন’-এর শিকার হয়েছেন অথবা এআই (AI) প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি হওয়া যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
এই আইনের ফলে প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর দায়বদ্ধতা বাড়বে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এই আইন প্রণয়নে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মধ্যে ঐকমত্য দেখা গেছে।
ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের আইনপ্রণেতারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মেটা, টিকটক, গুগল-এর মতো বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এবং বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থাও এই আইনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
আইনটি পাসের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প।
তাঁরা সরাসরি আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত হচ্ছে, তাই এর অপব্যবহারও বাড়ছে।
এই আইনটি সেই অপব্যবহার রোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পাবলিক সিটিজেন নামক একটি সংস্থার সংগঠক ইলেনা বেলার মতে, এই ধরনের কাজ যে সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়, আইনটি সেই বার্তাই দেয়।
বাংলাদেশেও সম্প্রতি সাইবার অপরাধ এবং অনলাইনে হয়রানির ঘটনা বাড়ছে।
তাই, যুক্তরাষ্ট্রের এই আইনটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে। আমাদের দেশেও এ ধরনের ঘটনার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের সুরক্ষায় আরও কঠোর আইন ও প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। একইসঙ্গে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোরও তাদের প্ল্যাটফর্মে আপত্তিকর ছবি ও কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন