পর্তুগালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি, তবে চরম ডানপন্থী একটি দলের উত্থান বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সাম্প্রতিক এই নির্বাচন দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে এবং ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের মতো পর্তুগালেও ডানপন্থী রাজনীতির প্রভাব বাড়ছে।
নির্বাচনে মধ্য-ডানপন্থী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (গণতান্ত্রিক জোট) ৮৯টি আসন লাভ করে, যা সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে বেশ দূরে। দলটির নেতা লুইস মন্টেনিগ্রোকে সরকার গঠনের জন্য অন্যান্য দলের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। উল্লেখ্য, এর আগে আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার কারণে ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল।
অন্যদিকে, নির্বাচনে চরম ডানপন্থী চেগা পার্টি ৫৮টি আসন লাভ করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এমনকি বিদেশে বসবাসকারী পর্তুগিজদের ভোটের হিসাব শেষে দলটি দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে। চেগা পার্টির এই উল্লেখযোগ্য উত্থান পর্তুগালের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করেছে। দলটির প্রধান আন্দ্রে ভেন্টুরা ইতোমধ্যে ইউরোপের অন্যান্য দেশের প্রভাবশালী ডানপন্থী নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
পর্তুগালের রাজনীতিতে ঐতিহ্যগতভাবে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ও সোশ্যালিস্ট পার্টি- এই দুই দলের প্রাধান্য ছিল। কিন্তু এবার চেগা পার্টির উত্থান সেই চিরাচরিত রাজনৈতিক ধারাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। “সেভ পর্তুগাল” শ্লোগান নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া চেগা নিজেদের একটি জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে পরিচয় দেয়। তারা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
নির্বাচনে অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে পর্তুগালে বৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখের কম, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখের বেশি। এদের মধ্যে অনেকে পর্যটন ও কৃষি খাতে কাজ করেন। এছাড়াও, বহু অভিবাসী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই দেশটিতে বসবাস করছেন। নির্বাচনের আগে সরকার প্রায় ১৮ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দেয়, যা বিতর্কের জন্ম দেয়।
আবাসন সংকটও ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। গত এক দশকে পর্তুগালে বাড়ির দাম ও ভাড়াও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে রাজধানী লিসবনে, যেখানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস, সেখানে গত বছর ভাড়ার দাম ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ বেড়েছে।
পর্তুগালের মানুষের জীবনযাত্রার মানও একটি উদ্বেগের বিষয়। দেশটির মানুষের গড় মাসিক বেতন প্রায় ১,২০০ ইউরো (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকার সমান)। যেখানে সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মাসিক মজুরি ৮৭০ ইউরো (প্রায় ১ লক্ষ ৩ হাজার টাকা)। এমন পরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক পর্তুগিজের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুর্নীতির অভিযোগ ও অর্থনৈতিক সংকট পর্তুগালের রাজনীতিতে অস্থিরতা বাড়িয়েছে। যার ফলস্বরূপ, ভোটাররা পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকে চরম ডানপন্থী দলগুলোর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস