স্টাফ রিপোর্টার।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসন অঞ্চল গঠনের ষড়যন্ত্র দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত
পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে স্থানীয় সন্ত্রাসী সংগঠন গুলো এবং ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার ‘বিশেষ স্বায়ত্তশাসন অঞ্চল’ গঠনের গভীর ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপটে ১৯৯৭ সালের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিকে ঘিরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তার লে. জে. অব. মতিউর রহমান বাস্তব সত্য উন্মোচিত করেছেন, তা গোটা জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
শনিবার ২৪ মে শনিবার মহাখালীস্থ সেনা কল্যাণ ভবন (এসকেএস টাওয়ারে) “সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের” উদ্যোগে আয়োজিত “পার্বত্য চট্টগ্রামকে উগ্রপন্থী সশস্ত্র সংগঠন গুলোর বিশেষ স্বায়ত্তশাসন অঞ্চল গঠনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের উপায়” শীর্ষক সেমিনারে অনুষ্ঠিত হয়।
লে. কর্নেল ফরিদুল আকবরের সভাপতিত্বে এবং সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর প্রধান সমন্বয়ক মোস্তফা আল ইহযায এর সঞ্চালনায়, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রিয়াল এডমিরাল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রধান আলোচনা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেঃ জেনারেল মতিউর রহমান, মূখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ডিএফইউজ ও সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদ এর মহাসচিব কাদের গণী চৌধুরী, এসময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ এর চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবুর রহমান।
আরো বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনৈতিক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাছুম, সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ জিকরিয়া, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল হাসান, মানবিক কবি ও সাহিত্যিক প্রাকৃতজ শামিমুরুমি টিটন,লেঃ কর্নেল আইয়ুব, লেঃ কর্নেল হাসিনুর রহমান অবঃ, কর্নেল বশির অবঃ, মেজর হারুনুর রশিদ অবঃ, মেজর আশরাফুজ্জান অবঃ, লেঃ কর্ণেল ফেরদৌস আজিজ অবঃ, লেঃ কর্নেল শাহাদাত হোসেন অবঃ, মেজর অবঃ মেজর ব্যরিস্টার এম সরওয়ার হোসাইন অব, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ লিগাল এইড কমিটির সভাপতি এডভোকেট পারভেজ তালুকদার, প্রভাষক এম শাহজাহান সাজু, মেজর অবঃ নোমান, মেজর জামান অবঃ, মেজর অবঃ শাহিন, এডভোকেট জাকির সিরাজি প্রমুখ।
সেমিনারে প্রধান আলোচক এর বক্তব্যে লেঃ জেনারেল মতিউর রহমান বলেন, বর্তমানে “প্রকৃত পক্ষে শান্তি চুক্তির কোনো ভিত্তি নেই। ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর যে চুক্তি হয়েছিল, সেটিকে আদৌ চুক্তি বলা যায় কিনা? সেখানে ব্যাপক সন্দেহ আছে। ৯৭’র শান্তিচুক্তির স্বাক্ষরিত হয়েছে ১৯৯৮ সালে, তা বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ সন্তু লারমার জ্ঞাতি ভাই ইউপিডিএফ নাম ধারণ করে ১৯৯৮ সালে নতুন করে আবার সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে। আর তাছাড়া শান্তিচুক্তির অন্যতম শর্ত যেটি, তা পালন করা হয়নাই। শান্তিচুক্তির প্রধান শর্ত ছিল অস্ত্র আত্মসমর্পণ করা,কিন্তু সন্তু লারমা আইওয়াস কিছু ভাঙা, মরিচা ধরা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণের নাটক করে। প্রকৃত পক্ষে তারা তাদের ভালো ভালো নামি-দামি অস্ত্রগুলো বিভিন্ন জায়গাতে বিভিন্নভাবে লুকিয়ে রেখেছিল। যেগুলো এখন সশস্ত্র আন্দোলনে ব্যবহার করছে।” এ সময় তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর অবদান বিশেষ করে পাহাড়ি জনগণের চিকিৎসা সেবায় তাদের অগ্রণী ভূমিকা, ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব। মোকাবেলা করে সেনাবাহিনী পাহাড়ে কাজ করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসন অঞ্চল গঠন করা হলে তা হবে সরাসরি দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত। এতে দেশের একটি অঙ্গহানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মূখ্য আলোচক কাদের গণী চৌধুরী বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার প্রশ্নে কোনো আপস করা চলবে না। দেশের সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবেন। এ ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের একটাই পরিচয় হবে সবাই বাংলাদেশি। শান্তিচুক্তির কিছু ধারা বৈষম্যমূলকও। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কেউ সমতল ভূমিতে জমি ক্রয় করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারলেও সমতল ভূমির কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামে জমি ক্রয় করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন না।
স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে প্রকৃতজ কবি শামিম রুমি টিটন বলেন ‘আদিবাসী দাবি করে পুরান ঢাকার লোকেরাও কাল স্বায়ত্তশাসন দাবি করলে আমাদের দেশের অবস্থা কী হবে? তিনি পার্বত্য এলাকা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও অপহরণ বন্ধ সেনাবাহিনীর অবস্থান আরো জোরদার করার দাবি জানান।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ও রাজনৈতিক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম মাসুম বলেন দ্রুত নিষিদ্ধ করা না হলে পাহাড়ে যেমন সন্ত্রাস, খুন, গুম, চাঁদাবাজি, অপহরণ বন্ধ হবে না তেমন বাংলাদেশ থেকে এঅঞ্চল বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রও বন্ধ হবে না। বন্ধ হবে না সাধারণ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালির ওপর সন্ত্রাসীদের অত্যাচার।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ এর চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবুর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ২৩ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
এসময় সংগঠন প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায বলেন, অবিলম্বে উগ্রপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন গুলোকে নিষিদ্ধ করা না হলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, জাতীয় নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা হুমকিতে পড়তে পারে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় শান্তি চুক্তি নামক অবৈধ কালো চুক্তি বাতিল করে একটি সম্প্রতি কমিশন গঠন করতে হবে।