চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে নতুন মোড়, পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মাত্রা লাভ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করার প্রতিক্রিয়ায়, চীনও মার্কিন কৃষি পণ্যের উপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যেকার অর্থনৈতিক সম্পর্কে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
মার্কিন বাণিজ্য নীতির প্রতিক্রিয়ায় চীন মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে। এর মধ্যে রয়েছে মুরগি, শুকরের মাংস, সয়াবিন এবং গরুর মাংসের মতো পণ্য। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই শুল্ক আগামী ১০ই মার্চ থেকে কার্যকর হবে। তবে, যেসব পণ্য ইতিমধ্যে চীন অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে, সেগুলোর উপর ১২ই এপ্রিল পর্যন্ত এই শুল্ক কার্যকর হবে না।
নতুন শুল্ক নীতি অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা মুরগি, গম, ভুট্টা এবং তুলার উপর ১৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। এছাড়াও, শস্যবীজ, সয়াবিন, শুকরের মাংস, গরুর মাংস, সামুদ্রিক খাবার, ফল, সবজি এবং দুগ্ধজাত পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অবশ্য চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এই বিষয়ে বলেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুগ্রহের পরিবর্তে শত্রুতা দেখাচ্ছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি আবারও বলতে চাই, চীনা জনগণ কখনোই খারাপ কিছুকে ভয় পায়নি, ভূতে বিশ্বাস করে না এবং তাদের কখনোই দুর্বল ভাবা উচিত নয়।”
বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য উভয় দেশের এই বাণিজ্য যুদ্ধ বেশ উদ্বেগের কারণ। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকেই সংযত হতে হবে। চীনের একটি থিংক ট্যাংকের গবেষণা পরিচালক, শু বোতাও বলেন, “চীনা সরকার এবং চীনা কোম্পানিগুলো সহজে ভয় পাওয়ার পাত্র নয়।”
শুধু শুল্ক আরোপই নয়, চীন বাণিজ্য সংক্রান্ত আরও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাঠ আমদানি স্থগিত করেছে, কারণ আমদানিকৃত কাঠের মধ্যে পোকামাকড় শনাক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে, তিনটি মার্কিন কোম্পানির সয়াবিন আমদানির যোগ্যতাও বাতিল করা হয়েছে, কারণ তাদের পাঠানো সয়াবিনে ছত্রাক এবং বীজ-প্রলেপনকারী উপাদান পাওয়া গেছে।
এছাড়াও, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ফাইবার অপটিক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একটি তদন্ত শুরু করেছে। মন্ত্রণালয় বলছে, একটি চীনা কোম্পানির অনুরোধের ভিত্তিতে এই তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কিছু মার্কিন রপ্তানিকারক এই পণ্যের উপর চীনের অ্যান্টি-ডাম্পিং ব্যবস্থা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
চীন এরই মধ্যে ১০টি মার্কিন কোম্পানিকে তাদের ‘অনির্ভরযোগ্য সত্তা’র তালিকায় যুক্ত করেছে। এর ফলে, কোম্পানিগুলো চীনে কোনো ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অথবা নতুন বিনিয়োগ করতে পারবে না। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে টিসিওএম, লিমিটেড পার্টনারশিপ; স্টিক রাডার এন্টারপ্রাইজেস এলএলসি; টেলেডাইন ব্রাউন ইঞ্জিনিয়ারিং; হান্টিংটন ইনগলস ইন্ডাস্ট্রিজ; এস থ্রি এরোডিফেন্স; কিউবিক কর্পোরেশন; টেক্সোর; এসিটি১ ফেডারেল; এক্সোভেরা এবং প্ল্যানেট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ।
অন্যদিকে, চীন ১৫টি মার্কিন কোম্পানিকে তাদের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা খাতের কোম্পানি যেমন জেনারেল ডায়নামিকস ল্যান্ড সিস্টেমস এবং জেনারেল অ্যাটমিক্স এরোনটিক্যাল সিস্টেমস। চীন মনে করে, এই কোম্পানিগুলো তাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থের জন্য হুমকি স্বরূপ।
২০২৪ সালে, চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ২৪.৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের কৃষি পণ্য আমদানি করেছে, যা দেশটির মোট কৃষি আমদানির ১৪ শতাংশ।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে আমদানি খরচও বেড়ে যাবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস