ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস জানিয়েছে, তারা গাজায় বন্দী এক মার্কিন-ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে।
এছাড়াও, হামাস আরও চারজন দ্বৈত নাগরিকের মরদেহ ফেরত দিতে সম্মত হয়েছে, যাদের গাজায় বন্দী অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) হামাস এই প্রস্তাব দিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং সকল ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে চলমান আলোচনার গতি বজায় রাখতেই তাদের এই পদক্ষেপ।
বর্তমানে কাতারে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে, তবে কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্যের খবর পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি এখনো দুই সপ্তাহ ধরে চলছে, কিন্তু ইসরায়েল গাজায় খাদ্য, ঔষধ ও বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, যা হামাসের উপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন ফিলিস্তিনিরা।
এমনকি এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আরব দেশগুলোও তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে এবং তারা ফিলিস্তিনিদের নিজ স্থানে পুনর্বাসনের একটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করা যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে আফ্রিকার কয়েকটি দেশের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের বিষয়ে আলোচনা করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পূর্ব আফ্রিকার তিনটি দেশের সঙ্গে গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে সেখানে পুনর্বাসনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
দেশগুলো হলো সুদান, সোমালিয়া এবং সোমালিয়ার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ড।
তবে, এই প্রস্তাবের নৈতিকতা এবং বাস্তবায়নযোগ্যতা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ উল্লেখিত দেশগুলো দরিদ্র এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহিংসতা-কবলিত।
এদিকে, পবিত্র রমজান মাসে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে শুধুমাত্র ৫৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
হামাস এই পদক্ষেপকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
অপরদিকে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ইসরায়েল যদি লেবাননের কিছু অংশ দখল করে রাখে, তাহলে তারা অস্ত্র ত্যাগ করবে না।
হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা এক ভাষণে বলেন, ইসরায়েলের এই আগ্রাসন লেবাননকে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।
সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে একটি ‘গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি সহিংসতা বন্ধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার ওপর জোর দেন।
সম্প্রতি, সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট একটি অস্থায়ী সংবিধানে স্বাক্ষর করেছেন, যা দেশটির ইসলামপন্থী শাসনের অধীনে থাকার নিশ্চয়তা দেয়, তবে এতে সকল সিরীয় নাগরিকের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান নাদাভ আর্গামানের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ এনেছেন।
নেতানিয়াহু অভিযোগ করেছেন, আর্গামান তার বিরুদ্ধে কিছু তথ্য প্রকাশ করার হুমকি দিচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস