আলোচিত অভিনেতা অ্যালেক বাল্ডউইনের (Alec Baldwin) সিনেমার শুটিং সেটে বন্দুকের গুলিতে এক নারী সিনেমাটোগ্রাফারের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে হওয়া মামলার বিচারক মেরি মার্লো সোমার (Mary Marlowe Sommer) আগামী মে মাসের শেষে বিচারকের পদ থেকে অবসর নিতে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো রাজ্যের প্রথম জুডিশিয়াল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের এই বিচারক গত ১৫ বছর ধরে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি এই জেলার প্রধান বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিচারক সোমারের কর্মজীবনের শুরুটা ছিলো একজন ল’ ক্লার্ক (law clerk) হিসেবে। এরপর তিনি আইনজীবী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পারিবারিক সহিংসতা ও পারিবারিক বিষয়াদি বিষয়ক হাজারো মামলার শুনানির দায়িত্বে ছিলেন।
বিচারক সোমার তার এই দীর্ঘ কর্মজীবনে পাওয়া অভিজ্ঞতাকে সম্মান ও আনন্দের বলে উল্লেখ করেছেন। একইসাথে আদালতের ব্যস্ত সময় থেকে দূরে যাওয়ার এটাই উপযুক্ত সময় বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, “আদালতে বিচার নিশ্চিত করতে যারা প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করেন, তাদের প্রতি আমি সবসময় শ্রদ্ধাশীল। কারণ তারা নিশ্চিত করেন যেনো সবাই আইনের আওতায় ন্যায়বিচার পান।”
গত গ্রীষ্মে, বিচারক সোমার ২০২১ সালের অক্টোবরে সিনেমা ‘রাস্ট’-এর শুটিং সেটে সিনেমাটোগ্রাফার হালিনা হাচিন্স-এর (Halyna Hutchins) মৃত্যুর ঘটনায় অ্যালেক বাল্ডউইনের বিরুদ্ধে আনা অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ খারিজ করে দেন।
উল্লেখ্য, সিনেমার দৃশ্যের মহড়ার সময় বাল্ডউইন হালিনা হাচিন্সের দিকে পিস্তল তাক করে ছিলেন, তখন সেটি থেকে গুলি বের হয়।
এতে হালিনার মৃত্যু হয় এবং পরিচালক জোয়েল সউজা (Joel Souza) আহত হন।
বাল্ডউইন দাবি করেন, তিনি পিস্তলের হাতুড়িটি টেনেছিলেন, ট্রিগার নয়, কিন্তু রিভলবার থেকে গুলি চলে যায়।
পরে, মামলার শুনানিতে জানা যায়, শুটিং সেটে ব্যবহৃত কিছু গুলির ব্যাপারে সন্দেহ ছিলো, যা সম্ভবত হালিনার মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত ছিল।
তবে সরকারি কৌঁসুলিরা জানান, এই গুলির সাথে ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।
অন্যদিকে বাল্ডউইনের আইনজীবীরা জানান, তদন্তকারীরা এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো অন্য একটি ফাইলে লুকিয়ে রেখেছিল।
এরপর বাল্ডউইন হয়রানির শিকার হয়েছেন দাবি করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি দেওয়ানি মামলা করেন।
এছাড়াও, এই শুটিংয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সিনেমার অস্ত্র তত্ত্বাবধায়ক হান্না গুতেরেজ-রিডের (Hannah Gutierrez-Reed) বিরুদ্ধেও অনিচ্ছাকৃত হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
বিচারক সোমার এই মামলারও সভাপতিত্ব করেন।
বর্তমান প্রধান বিচারক ব্রায়ান বিয়েডশেইড (Bryan Biedscheid) জানিয়েছেন, বিচারক সোমার সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং আইনের প্রতি তার অবিচল সমর্থন ছিল।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিচারক সোমার তার দায়িত্ব পালনকালে পারিবারিক, শিশু নির্যাতন ও কিশোর অপরাধ বিষয়ক প্রায় ২১,৬০০ টি মামলার রায় দিয়েছেন।
২০১২ সাল থেকে তিনি ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করতে শুরু করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল বাল্ডউইন এবং গুতেরেজ-রিডের মামলা।
এছাড়া, তিনি সাবেক শিক্ষক গ্যারি গ্রেগর-এর শিশু নির্যাতনের মামলা এবং জেনিইন জারামিলো নামের এক নারীর মামলা পরিচালনা করেন, যিনি বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত ফায়ারফাইটারকে হত্যা করেছিলেন।
বিচারক সোমারের চাকরির মেয়াদ ২০২৮ সাল পর্যন্ত ছিল।
তার পদত্যাগের পর জুডিশিয়াল মনোনয়ন কমিশন নতুন বিচারক নিয়োগের জন্য আবেদনকারীদের বিবেচনা করবে এবং গভর্নরের কাছে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নিয়োগের সুপারিশ করবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (AP)