মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানোর একটি সরকারি সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন দেশটির একজন ফেডারেল বিচারক। এই সিদ্ধান্তের ফলে আলঝাইমার রোগ, ক্যান্সার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের গবেষণা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বোস্টনের ফেডারেল আদালতের বিচারক অ্যাঞ্জেল কেলি এই সংক্রান্ত এক মামলায় বুধবার এই অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (National Institutes of Health – NIH) প্রতি বছর প্রায় ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার গবেষণা খাতে বরাদ্দ করে থাকে। এই অর্থের একটি অংশ সরাসরি গবেষকদের বেতন ও গবেষণাগারের সরঞ্জামের জন্য ব্যয় হয়, এবং অন্য অংশটি ‘পরোক্ষ খরচ’ হিসেবে পরিচিত, যা গবেষণার প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত কাজে লাগে। ট্রাম্প প্রশাসন এই পরোক্ষ খরচকে ‘অতিরিক্ত খরচ’ হিসেবে উল্লেখ করে তা কমানোর প্রস্তাব দেয়। নতুন নীতি অনুযায়ী, এই খাতে বরাদ্দ ১৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ করার কথা ছিল, যা বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হতো।
কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আদালতে যায়। তাদের মতে, এই অর্থ কমিয়ে দিলে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হবে এবং জীবনহানিও ঘটতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গবেষণাগারের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য বিদ্যুৎ খরচ, বর্জ্য নিষ্কাশন, নিরাপত্তা কর্মীদের বেতনসহ বিভিন্ন অপরিহার্য খাতে এই অর্থ ব্যবহার করা হয়। আগে সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এই খরচের হার নির্ধারণ করত। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, কোনো প্রতিষ্ঠানের যদি পরোক্ষ খরচের হার ৫০ শতাংশ হয়, তবে তারা ১ লক্ষ ডলারের একটি প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত আরও ৫০ হাজার ডলার পেত।
আদালতের এই রায়ের ফলে চিকিৎসা গবেষণার অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আমেরিকান মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের ড. ডেভিড জে. স্করটন এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই বেআইনি পদক্ষেপ চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে ধীর করে দিত এবং মানুষের জীবনহানি ঘটাতো।”
উল্লেখ্য, উন্নত বিশ্বে চিকিৎসা গবেষণায় অর্থ বিনিয়োগের ফলে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও উন্নত চিকিৎসার সুযোগ তৈরি হয়, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও গবেষণার মাধ্যমে আরও বিকশিত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।