যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনাইকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে ইরানের দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তেহরানের সঙ্গে নতুন করে সমঝোতা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার প্রচারিত একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নিজেই এই কথা জানান।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তিনি খামেনাইকে একটি চিঠি লিখেছেন এবং আলোচনায় বসার জন্য অনুরোধ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আলোচনা না হলে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার মতো কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
যদিও ইরানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত চিঠি পাওয়ার কোনো খবর নিশ্চিত করা হয়নি।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উভয়ই ঘোষণা করেছে যে তারা কোনো অবস্থাতেই ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেবে না।
ফলে, তেহরান যদি অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখে, তাহলে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা আরও বাড়বে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের যে পরমাণু চুক্তি হয়েছিল, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে এনেছিলেন।
এরপর ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান সমুদ্রপথে কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটায় এবং সৌদি আরবের তেল উৎপাদনও কিছু সময়ের জন্য কমে যায়।
পরমাণু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইরানকে ৩.৬৭ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি ছিল না এবং তাদের কাছে ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি ইউরেনিয়াম মজুত করারও সুযোগ ছিল না।
কিন্তু আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুত ৮,২৯৪.৪ কিলোগ্রামে পৌঁছেছে এবং তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই চিঠি পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো, ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা।
কারণ, ইরানের অর্থনীতি বর্তমানে বেশ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
দেশটির মুদ্রা রিয়ালের ব্যাপক দরপতন হয়েছে এবং বেকারত্বও বেড়েছে।
তাছাড়া, হিজাব বিতর্কের জেরে নারীদের প্রতিবাদ এখনো অব্যাহত আছে।
এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনাই গত আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
তবে সম্প্রতি তিনি আলোচনার বিরোধিতা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা ‘বুদ্ধিমানের কাজ হবে না’।
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানও খামেনাইর সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
বর্তমানে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।
গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সময় উভয় দেশ সরাসরি একে অপরের ওপর হামলার অভিযোগ এনেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।