নতুন দিগন্তের আলো: দিন বাঁচানো সময় নিয়ে উদ্বেগে মার্কিন গলফ শিল্প
দিনের আলো দীর্ঘ করার জন্য সময়সূচি পরিবর্তনের যে চল, ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’ (Daylight Saving Time) নামে পরিচিত, তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে আলোচনা। মূলত গ্রীষ্মকালে দিনের আলোর সুবিধা নিতে ঘড়ি এক ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়, যা সেখানকার জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে। এই পরিবর্তনের কারণে সেখানকার গলফ শিল্পে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে বর্তমানে এই ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’ ব্যবস্থা চালু রাখা হবে নাকি এটিকে স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। দেশটির গলফ শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা চান, এই সময়সূচি যেন বহাল থাকে। তাদের মতে, সময় পরিবর্তনের ফলে সন্ধ্যার দিকে গলফ খেলার সুযোগ বাড়ে, যা ক্লাবের রেভিনিউ বাড়াতে সহায়ক। একইসঙ্গে, এই পরিবর্তনের ফলে যারা বিকেলে খেলতে আসেন, তারা ক্লাব হাউজে খাবার ও পানীয় কিনে থাকেন, যা ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নেব্রাস্কার স্টোন ক্রিক গলফ কোর্সের জেনারেল ম্যানেজার কনার ফ্যারেল জানান, ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’ যদি বাতিল হয়ে যায়, তবে প্রতিদিন তাদের একশ’টি খেলার সময় (টি টাইম) হারাতে হবে। এর ফলে বছরে প্রায় ৫ লক্ষ মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৫ কোটি ২২ লক্ষ টাকার বেশি) ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, গলফ খেলার সঙ্গে ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’-এর সম্পর্ক বেশ গভীর। ১৯০৫ সালে উইলিয়াম উইলেট নামের এক ব্রিটিশ ব্যক্তি, যিনি একজন গলফ খেলোয়াড় ছিলেন, এপ্রিল মাসে ঘড়ি এক ঘণ্টা এগিয়ে আনা এবং সেপ্টেম্বর মাসে তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র এই পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি গ্রহণ করে।
১৯৬৬ সালে মার্কিন কংগ্রেসে ‘ইউনিফর্ম টাইম অ্যাক্ট’ পাস হয়, যার মাধ্যমে বছরে দু’বার সময় পরিবর্তনের নিয়ম চালু হয়। এরপর ১৯৮০-এর দশকে গলফ শিল্পের তদবিরের কারণে ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’-এর সময় এক মাস বাড়ানো হয়।
তবে, এই সময় পরিবর্তনের কারণে অনেকেই ঘুমের সমস্যাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভোগেন। তাই অনেক রাজ্যে এটি বন্ধ করার জন্য বিল আনা হয়েছে। ন্যাশনাল কনফারেন্স অফ স্টেট লেজিসলেচারের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় বছরে ২০টি রাজ্যে সারা বছর ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’ চালু রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে গলফ শিল্প সংশ্লিষ্টদের লবিংয়ের ভূমিকা রয়েছে। যদিও কিছু রাজ্যে স্ট্যান্ডার্ড টাইমকে স্থায়ী করারও চেষ্টা চলছে। অ্যারিজোনা এবং হাওয়াইয়ের মতো কয়েকটি রাজ্যে ইতোমধ্যে স্ট্যান্ডার্ড টাইম চালু রয়েছে। তবে, স্থায়ীভাবে ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’ চালু করতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন।
নেব্রাসকার গলফ অ্যালায়েন্সের লবিস্ট জো কোহাউট জানান, বিকেলে গলফ খেলার আসর কিছু কোর্সের বার্ষিক আয়ের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত যোগান দেয়। এছাড়াও, অনেক প্রশিক্ষক জানিয়েছেন, তাদের প্রায় ৫০ শতাংশ প্রশিক্ষণ বিকেল চারটার পরে হয়ে থাকে। তাঁর মতে, স্থায়ী স্ট্যান্ডার্ড টাইম হলে নেব্রাসকার গলফ কোর্সগুলো রাজস্ব হারাবে এবং এতে কোর্সের মূল্য বাড়াতে বাধ্য হবে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে, ইউটা গলফ অ্যাসোসিয়েশনও স্ট্যান্ডার্ড টাইমকে স্থায়ী করার বিলের বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, বছরে দু’বার ঘড়ি পরিবর্তনের অসুবিধা থাকলেও, সন্ধ্যার দিকে বেশি সময় ধরে দিনের আলো পাওয়ার সুবিধা অনেক বেশি।
ইন্ডিয়ানার সিনেটর ও গলফ কোর্স মালিক লিন্ডা রজার্স ২০০৬ সালে রাজ্যে ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’ চালু করতে সফল হয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড টাইমের পক্ষে আনা প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন। তাঁর মতে, এই পরিবর্তনের ফলে যারা বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করেন, তারাও অন্তত নয় হোল খেলার সুযোগ পান। শুধু গলফ নয়, গ্রীষ্মকালে আরও অনেক ধরনের আউটডোর কার্যকলাপের সুযোগ থাকে।
ন্যাশনাল গলফ কোর্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জে কারেন জানান, তাদের প্রায় ৪ হাজার সদস্যের মধ্যে বেশিরভাগই হয় ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’ বহাল রাখতে চান, না হয় এটিকে স্থায়ী করতে চান। স্ট্যান্ডার্ড টাইম স্থায়ী করার পক্ষে তারা খুবই কম সমর্থন পেয়েছেন।
কারেন আরও জানান, ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’-এর স্থায়ীত্ব কিছু কোর্সের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, যেগুলোতে মূলত সকালের দিকে খেলা হয়। এর কারণ হিসেবে তিনি অবসরপ্রাপ্ত মানুষের আবাসস্থল এবং অবকাশ যাপনের স্থানগুলোতে খেলার সময় এবং ডিনারের সময়সূচির কথা উল্লেখ করেন।
আইওয়ার রিপাবলিকান প্রতিনিধি জন উইলসও একটি বিল এনেছিলেন, যেখানে ‘ডেলাইট সেভিং টাইম’-কে স্থায়ী করার প্রস্তাব ছিল। তবে, স্ট্যান্ডার্ড টাইমের পক্ষে আসা যুক্তির কারণে তিনি এখন বিলটি সংশোধন করার কথা ভাবছেন।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, সরকারি নীতি কীভাবে একটি নির্দিষ্ট শিল্পের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস