শিরোনাম: ক্যান্সার আক্রান্ত, অভিভাবকদের জানাতে দ্বিধাগ্রস্ত: কঠিন পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন
একজন নারী, যিনি চতুর্থ স্তরের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর উদ্বেগ থেকে এই খবরটি গোপন রাখতে চাইছেন। বাবা মদ্যপ ছিলেন, মা’য়ের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা ছিল এবং পরিবারের অন্য সদস্যরাও তাঁদের থেকে দূরে থাকতেন। কঠিন শৈশব আর তিক্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে তাঁকে। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর অভিভাবকদের এই কঠিন সত্যটি জানাবেন কিনা, সেই দ্বিধায় ভুগছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অতীতে পাওয়া আঘাতগুলো, যা তিনি আজও ভুলতে পারেননি।
ছোটবেলায় বাবার মদ্যপানের কারণে পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকত। মা’য়ের মানসিক অসুস্থতার কারণেও তাঁদের জীবনে অনেক দুর্ভোগ ছিল। এই কারণে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাঁদের এড়িয়ে চলতেন। একরকম একঘরে হয়েই দিন কাটাতে হয়েছে তাঁদের। বাবার মদ্যপানের কারণে পরিবারে যে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছিল, সে বিষয়ে তিনি কখনো কোনো কথা বলেননি, এমনকি ক্ষমাও চাননি।
বর্তমানে তিনি একটি ভালো ক্যারিয়ার ও বাড়ির মালিক। তাঁর জীবনে ভালো বন্ধুও রয়েছে। কিন্তু অতীতের সেই খারাপ স্মৃতিগুলো আজও তাঁর মনে গভীর দুঃখ দেয়। তিনি চান, তাঁর বাবা-মা’য়ের কাছে অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে পারতেন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গেলে অতীতের অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়। তাই, এই পরিস্থিতিতে তিনি তাঁর ক্যান্সারের কথা পরিবারকে জানাবেন কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
এই পরিস্থিতিতে তিনি তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। ভাই তাঁকে এই বিষয়ে পরিবারকে কিছু না জানাতে পরামর্শ দেন। কারণ, তাঁর ধারণা, তাঁর বাবা-মা হয়তো এমন কিছু বলবেন যা শুনে তিনি আরও কষ্ট পাবেন। মায়ের ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং চার্চ ও ধর্মকে ঘৃণা করার বিষয়গুলোও তাঁর উদ্বেগের কারণ। এমতাবস্থায় তিনি কি সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজের জীবন নিয়ে ভাববেন? এই দুশ্চিন্তা আর অপরাধবোধ নিয়ে কিভাবে বাঁচবেন, সেই প্রশ্ন তাঁর মনে।
একজন বিশেষজ্ঞ মনোবিদের সঙ্গে কথা বলে তিনি তাঁর দ্বিধা দূর করার চেষ্টা করছেন। মনোবিদ তাঁর মানসিক অবস্থা এবং অতীতের ঘটনার প্রভাব সম্পর্কে অবগত। তিনি মনে করেন, ক্যান্সারের এই খবরটি তাঁর মধ্যে রাগ ও কষ্টের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যেহেতু ছোটবেলায় তিনি তাঁর বাবা-মা’র কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাননি, তাই এখন তিনি তাঁদের কাছ থেকে সেই সমর্থন আশা করছেন।
মনোবিদ আরও মনে করেন, তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁকে এই কঠিন সময়ে মানসিক শান্তি দিতে পারে। তিনি তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে পারেন, যদিও বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সীমিত রাখা উচিত। এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের কিছু না জানানোই তাঁর জন্য ভালো।
এই পরিস্থিতিতে তিনি একা নন। তাঁর পাশে আছেন বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। তাঁদের পরামর্শ ও সহযোগিতা তাঁকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান