সিরিয়ায় দুই দিনের সংঘর্ষ ও প্রতিশোধমূলক হামলায় নিহত ৬০০ ছাড়িয়েছে, যা দেশটির ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা।
বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনী এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগতদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে শুক্রবার থেকে প্রতিশোধের নামে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালানো হয়।
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) বরাত দিয়ে জানা যায়, সিরিয়ার নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা ক্ষমতা দখলের তিন মাস পর এই সংঘর্ষ নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিদ্রোহীদের ক্ষমতাচ্যুত করার পর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও আসাদ অনুগতদের মধ্যে এমন ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়।
সরকার এই সহিংসতার জন্য আসাদ অনুগতদের দায়ী করেছে এবং এটিকে কিছু ‘ব্যক্তিগত কার্যকলাপের’ ফল হিসেবে উল্লেখ করেছে।
সংঘর্ষের পর প্রতিশোধের আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির সংখ্যালঘু আল্যাভী সম্প্রদায়। সুন্নি মুসলিম বন্দুকধারীরা আল্যাভীদের উপর হামলা চালায়। বিদ্রোহীদের ক্ষমতাচ্যুত করার নেতৃত্বে ছিল হায়াত তাহরির আল-শাম নামের একটি গোষ্ঠী। আসাদের শাসনামলে আল্যাভীরা ছিল তার প্রধান সমর্থক গোষ্ঠী।
আলাভি গ্রাম ও শহরগুলোর বাসিন্দারা এপিকে জানান, বন্দুকধারীরা তাদের বাড়িঘরে ঢুকে পুরুষদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। অনেক আল্যাভীর বাড়ি লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আতঙ্কে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পাহাড়ের দিকে আশ্রয় নিয়েছে।
বানিয়াস শহরের বাসিন্দারা জানান, রাস্তায় মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে, যা দাফন করারও সুযোগ হয়নি। বন্দুকধারীরা বাসিন্দাদের তাদের প্রতিবেশী ও স্বজনদের মরদেহ সরাতে বাধা দেয়।
বানিয়াসের বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সী আলী শেহা জানান, সংঘর্ষের সময় অন্তত ২০ জন প্রতিবেশী ও সহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে তাদের দোকান ও বাড়িতে হত্যা করা হয়। আলী শেহা এই হামলাকে আল্যাভীদের উপর আসাদ সরকারের আগের অপরাধের প্রতিশোধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও জানান, হামলাকারীদের মধ্যে বিদেশি যোদ্ধা ও প্রতিবেশী শহর থেকে আসা মিলিশিয়ারাও ছিল।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিশোধমূলক হামলায় ৪২৮ জন আলাভীকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া নিহত হয়েছেন ১২০ জন আসাদপন্থী যোদ্ধা এবং ৮৯ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। এসওএইচআর-এর প্রধান রামী আবদুর রহমান জানান, শনিবার সকালে প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি এই হত্যাকাণ্ডকে সিরিয়ার সংঘাতের অন্যতম “বৃহত্তম গণহত্যা” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সরকারি বাহিনী আসাদ অনুগতদের কাছ থেকে অনেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে। কর্তৃপক্ষ উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে যাওয়া সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে এবং ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে তুওয়াইম গ্রামে নিহত ৩১ জনের মরদেহ একটি গণকবরে দাফন করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯ জন শিশু ও ৪ জন নারী ছিলেন। লেবাননের পার্লামেন্টে আল্যাভীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সদস্য হাইদার নাসের জানিয়েছেন, অনেক সিরীয় নাগরিক জীবন বাঁচাতে লেবাননে পালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, অনেকে সিরিয়ার হেমেইমিম-এ অবস্থিত রাশিয়ান বিমান ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাশার আল-আসাদের পতনের পর অনেক আল্যাভীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করা সাবেক সৈন্যদেরও হত্যা করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)