যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে শনিবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এপির খবর অনুযায়ী, গত শুক্রবার গভীর রাতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক এলাকার একটি শহরে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে। শহরটির আটটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ডবরাপিলিয়া শহরে চালানো এই হামলায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউক্রেনের জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, উদ্ধারকর্মীরা যখন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন, তখন একটি রুশ ড্রোন তাদের একটি অগ্নিনির্বাপক গাড়িতে আঘাত করে।
স্থানীয় গভর্নর ভাদিম ফিলাশকিন জানিয়েছেন, ফ্রন্টলাইনের শহর পোকরভস্ক, কন্সতান্তিনিভকা, মিরনোগ্রাদ ও ইভানোপিলিয়াতেও ৬ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ অঞ্চলে একটি বেসামরিক ওয়ার্কশপে ড্রোন হামলায় আরও ৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গভর্নর ফিলাশকিন শনিবারকে এই অঞ্চলের জন্য শোকের দিন ঘোষণা করেছেন এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মরদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ডবরাপিলিয়ায় হামলায় অন্তত ৫ শিশু আহত হয়েছে। তিনি বলেন, “গত রাতে রুশ বাহিনী ডবরাপিলিয়ার কেন্দ্রে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। জরুরি পরিষেবা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর, তারা উদ্ধারকর্মীদের ওপর আরেকটি হামলা চালায়। এটি একটি জঘন্য ও অমানবিক কৌশল, যা রাশিয়া প্রায়ই ব্যবহার করে।”
এর আগে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি কেন্দ্রগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এতে দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা জনগণের জীবনযাত্রা ও সামরিক কারখানায় অস্ত্র উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করে একটি শান্তি চুক্তি করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সফরের পরেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমার মনে হয়, ভ্লাদিমির পুতিন যা করছেন, তা অন্য যে কেউ হলে তাই করতেন।”
শনিবার জেলেনস্কি সরাসরি গোয়েন্দা তথ্য বন্ধের বিষয়ে কিছু না বললেও, মস্কোর বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে ট্রাম্পের দেওয়া আগের একটি বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানান। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ ও চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি না করা পর্যন্ত তাদের ওপর বড় আকারের ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপ করা উচিত। জেলেনস্কি বলেন, “যে কোনো কিছুই যা পুতিনকে এই যুদ্ধের জন্য অর্থ যোগাতে সাহায্য করে, তা বন্ধ করতে হবে।”
একইসঙ্গে তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে তিনি এবং ইউক্রেনের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা সৌদি আরবে যাবেন। সেখানে তারা মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা এই যুদ্ধের শুরু থেকেই শান্তির চেষ্টা করছি। আমাদের হাতে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব রয়েছে। দ্রুত ও কার্যকরভাবে পদক্ষেপ নেওয়াটাই এখন মূল বিষয়।”
অন্যদিকে, ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রুশ সেনারা গত রাতে তিনটি ইskander ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১৪৫টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৭৯টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এছাড়া, ৫৪টি ড্রোন কোনো ক্ষতিসাধন করতে ব্যর্থ হয়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের ছোড়া ৩১টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ২৬টি ছিল দেশটির ক্রাসনোদার অঞ্চলের ওপর।
এদিকে, রাশিয়ার লেনিনগ্রাদ অঞ্চলের কিনইএফ তেল শোধনাগারে একটি ড্রোন ধ্বংসাবশেষের কারণে আগুন লেগেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
তথ্য সূত্র: এপি