দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইওলকে শনিবার কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সিউল আদালত তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল করার পরেই এই সিদ্ধান্ত আসে। ইয়ুনকে বিদ্রোহের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, তবে তাকে আর আটক রাখা হবে না। খবরটি দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ইয়ুন তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সমর্থকরা তখন “ইয়ুন সুক-ইওল জিন্দাবাদ” স্লোগান দিচ্ছিল এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা উড়িয়েছিল। এরপর তিনি একটি কালো ভ্যানে করে তার বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
ইয়ুন-এর আইনজীবীদের মাধ্যমে প্রচারিত এক বিবৃতিতে তিনি সিউল সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, আদালত “বেআইনি কাজ সংশোধন করার সাহসী সিদ্ধান্ত” নিয়েছে। ইয়ুন তার সমর্থকদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান এবং যারা তার অভিশংসনের বিরুদ্ধে অনশন করছিলেন, তাদের অনশন ভাঙার আহ্বান জানান।
গত জানুয়ারিতে ইয়ুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি ডিসেম্বরের ৩ তারিখে সামরিক আইন জারি করে দেশকে রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। এর আগে, বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পরিষদ তাকে অভিশংসিত করে, যার ফলস্বরূপ তিনি তার পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন।
বর্তমানে, সাংবিধানিক আদালত ইয়ুনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারণ করা হবে নাকি পুনর্বহাল করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। আদালত যদি তার অভিশংসন বহাল রাখে, তাহলে দুই মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সিউল সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট শুক্রবার ইয়ুনের মুক্তির আবেদন গ্রহণ করে। আদালত জানায়, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ইয়ুনের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন যে, যে তদন্ত সংস্থা তাকে গ্রেপ্তার করেছিল, বিদ্রোহের অভিযোগের তদন্ত করার আইনগত অধিকার তাদের ছিল না। আদালত আরও বলেছে যে, ইয়ুনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল।
প্রসিকিউটররা সিউল আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই ইয়ুনকে মুক্তি দেওয়া হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার আইন অনুযায়ী, আদালত কর্তৃক কোনো আসামির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল হওয়ার পরেও প্রসিকিউটররা আপিল করার মাধ্যমে তাকে আটকে রাখতে পারে।
ইয়ুনের মুক্তির তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি। দলটি প্রসিকিউটরদের ইয়ুনের “অনুগত” হিসেবে অভিহিত করে এবং সাংবিধানিক আদালতকে দ্রুত ইয়ুনকে অপসারণের আহ্বান জানায়, যাতে জনগণের মধ্যে আরও বেশি অস্থিরতা তৈরি না হয়।
সামরিক আইন জারির প্রেক্ষাপটে, ইয়ুন কয়েকশ সেনা ও পুলিশ সদস্যকে জাতীয় পরিষদে পাঠিয়েছিলেন। এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে যে ইয়ুন সংসদ সদস্যদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে সামরিক আইনের ওপর ভোটাভুটি ব্যর্থ করা যায়। যদিও ইয়ুন দাবি করেন, তিনি শুধু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিলেন।
অবশেষে, আইনপ্রণেতারা একত্রিত হয়ে ইয়ুনের সামরিক আইন বাতিল করতে ভোট দেন। তদন্তকারীরা অভিযোগ করেছেন যে ইয়ুনের সামরিক আইন জারি করা বিদ্রোহের শামিল। যদি তিনি এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। যদিও ইয়ুনের রাষ্ট্রপতি পদ তার বিরুদ্ধে আনা গুরুতর অভিযোগগুলো থেকে তাকে সুরক্ষা দেয় না।
ইয়ুন বলেছেন, তিনি বেশি দিন সামরিক আইন বহাল রাখার পরিকল্পনা করেননি। তার মতে, তিনি শুধুমাত্র ডেমোক্রেটিক পার্টির বিপদ সম্পর্কে জনসাধারণকে জানাতে চেয়েছিলেন। এই পার্টি তার এজেন্ডায় বাধা দিচ্ছিল এবং অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটরকে অভিশংসিত করেছিল। সামরিক আইন জারির সময় ইয়ুন জাতীয় পরিষদকে “অপরাধীদের আস্তানা” এবং “রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে রক্ষণশীল ও উদারপন্থীদের মধ্যে বিভেদ চরম আকার ধারণ করেছে। ইয়ুনের অভিশংসনের পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ায় সিউলের রাস্তাগুলোতে বিভেদ আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাংবিধানিক আদালত যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, এই বিভেদ আরও বাড়বে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস