বিজ্ঞানীরা পর্তুগালে পাওয়া একটি প্রাচীন শিশুর কঙ্কালের বয়স নির্ধারণ করেছেন, যা মানুষের বিবর্তন এবং নিয়ান্ডারথালদের (Neanderthals) সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে নতুন তথ্য দিয়েছে।
প্রায় 27 বছর আগে পর্তুগালের লাগার ভেলহো (Lagar Velho) নামক স্থানে এই শিশুর কঙ্কালটি আবিষ্কৃত হয়েছিল।
কঙ্কালটির মধ্যে মানুষের এবং নিয়ান্ডারথাল উভয় বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ ছিল, যা বিজ্ঞানীদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
শিশুটির কঙ্কাল পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে এর কিছু বৈশিষ্ট্য, যেমন শরীরের গঠন এবং চোয়ালের হাড়, নিয়ান্ডারথালদের মতো।
এই কারণে, গবেষকরা ধারণা করেন যে শিশুটি এমন একটি জনগোষ্ঠীর বংশধর ছিল, যেখানে মানুষ এবং নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে মিলন ঘটেছিল।
সেই সময়ে এই ধারণাটি নতুন ছিল, তবে জিনগত গবেষণায় (genetic research) এখন প্রমাণিত হয়েছে যে এমন জনগোষ্ঠী ছিল এবং আজকের মানুষের মধ্যেও নিয়ান্ডারথালদের ডিএনএ (DNA) পাওয়া যায়।
আগে কঙ্কালটির বয়স নির্ধারণ করা কঠিন ছিল।
কারণ কঙ্কালের হাড়ের মধ্যে ছোট শিকড় প্রবেশ করেছিল এবং অন্যান্য দূষণের কারণে সনাক্তকরণে সমস্যা হচ্ছিল।
সেই কারণে বিজ্ঞানীরা কঙ্কালের চারপাশের কাঠকয়লা এবং পশুর হাড় পরীক্ষা করে এর বয়স নির্ধারণ করেছিলেন, যা ছিল প্রায় 27,700 থেকে 29,700 বছর আগে।
তবে, প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বিজ্ঞানীরা এখন কঙ্কালটির বয়স আরও সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
তারা হাড়ের মধ্যে থাকা একটি প্রোটিনের (protein) অংশ বিশ্লেষণ করেছেন, যা প্রধানত মানুষের হাড়ে পাওয়া যায়।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে কঙ্কালটির বয়স আগের ধারণার কাছাকাছি, অর্থাৎ এটি 27,700 থেকে 28,600 বছর আগের।
এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Miami) গবেষক বেথান লিনস্কট (Bethan Linscott) বলেন, “শিশুটির কঙ্কালের বয়স সফলভাবে নির্ধারণ করতে পারাটা তাদের গল্পের একটি ক্ষুদ্র অংশ ফিরিয়ে দেওয়ার মতো।
এটি অত্যন্ত সম্মানের।”
তিনি আরও যোগ করেন, “কঙ্কালটি শুধু একটি কঙ্কাল নয়, এটি ছিল একটি শিশুর কবর।
হাড়ের বয়স নির্ধারণ করার সময় আমার মনে হয়েছিল, এই শিশুকে কে ভালোবাসত, কিসে সে হাসত, এবং এই পৃথিবীতে তার চার বছরের জীবন কেমন ছিল।”
এ বিষয়ে ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (Durham University) প্রত্নতত্ত্ববিদ (archeologist) পল পেটিট (Paul Pettitt) বলেছেন, “এই গবেষণা প্রমাণ করে যে বয়স নির্ধারণের পদ্ধতিগুলো আরও কার্যকর হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা অতীতের বিষয়ে আরও ভালো ধারণা লাভ করতে পারছেন।”
লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Lisbon) গবেষক জোয়াও জিলহাও (João Zilhão) বলেন, “মানুষ কোথা থেকে এসেছে, তা নিয়ে গবেষণা করা গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, আমরা যেমন আমাদের মা-বাবার ছবি সংরক্ষণ করি, তেমনই এটি আমাদের অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)