শিরোনাম: ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের বিতাড়নের তালিকায় হাজারো নাম, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তালিকা পেশ ইসরায়েলি গোষ্ঠীর
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিতাড়নের জন্য একটি ‘বিতাড়ন তালিকা’ তৈরি করেছে ইসরায়েলপন্থী একটি চরম ডানপন্থী গোষ্ঠী। তারা এই তালিকায় হাজারো শিক্ষার্থীর নাম যুক্ত করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ফিলিস্তিনি আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়, এবং এই ঘটনার দায়ও স্বীকার করেছে বিতর্কিত এই সংগঠনটি।
সংবাদ সংস্থা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বেতার ইউএস’ নামক এই গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তারা শুধু অভিবাসী শিক্ষার্থী নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরও বিতাড়নের চেষ্টা করবে। তাদের দাবি, এই বিতাড়ন তালিকার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাস’ সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
বেতার ইউএস-এর মুখপাত্র ড্যানিয়েল লেভি গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, কলম্বিয়া, পেনসিলভেনিয়া, ইউসিএলএ, এবং সিরাকিউস বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের নাম তারা ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে পেশ করেছেন, যাদের ভিসাধারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং যারা ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে জড়িত ছিলেন।
গোষ্ঠীটি তাদের দাবির সমর্থনে টেপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্যসহ বিভিন্ন প্রমাণ জমা দিয়েছে বলেও জানিয়েছে। তারা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সিনেটর মার্কো রুবিও, হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করছে। তবে, হোয়াইট হাউস এবং পররাষ্ট্র দপ্তর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
বেতার ইউএস-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক রস গ্লিক জানান, গত বছর থেকে এই তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। তার মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতা গ্রহণের ফলে তাদের এই কার্যক্রম আরও সহজ হয়েছে।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে জড়িত বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিতাড়নের অঙ্গীকার করেছিলেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভকে তিনি হামাসের প্রতি সমর্থন হিসেবে চিহ্নিত করতেন। এছাড়াও, জানা গেছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহারের মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের বিতাড়নের পরিকল্পনা করছে।
গত সপ্তাহে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজা সংহতি শিবিরের প্রধান আলোচক মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারের ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা মনে করছেন, এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন। খলিলের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ম্যানহাটনের একটি আদালত ভবনের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে।
এদিকে, বিতাড়ন অভিযানের সমর্থনে বিতর্কিত এই পদক্ষেপের কারণে মার্কিন ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। কিছু গোষ্ঠী এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, অনেকে একে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন।
একাধিক মানবাধিকার সংগঠন একযোগে এক বিবৃতিতে মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, খলিলের মত প্রকাশের বিষয়বস্তু যা-ই হোক না কেন, তার গ্রেপ্তারির ফলে ইহুদিদের নিরাপত্তা বাড়বে না। বরং, অতীতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করার আইনগুলো প্রায়ই ইহুদি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড মায়ার্স মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ‘জাতিবিদ্বেষকে’ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তার মতে, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দুর্বল করতে চায়, যা উদারনৈতিক ও প্রগতিশীল চিন্তাধারার কেন্দ্র।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান