যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তিনি নতুন করে বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করেছেন, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষ করে, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও বাণিজ্য নিয়ে আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেছিলেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল চীন।
এবার তিনি আরও বড় পরিসরে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন।
ক্ষমতায় আসার পরপরই তিনি মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের মতো প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন।
ভবিষ্যতে আরও অনেক দেশের ওপর এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এবার এর ফল আরও সুদূরপ্রসারী হতে পারে এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর, কারণ পণ্যের দাম বাড়বে।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প চীনের ওপর অন্তত ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।
এছাড়াও, অন্যান্য দেশের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দেন তিনি।
যদিও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ধরনের ব্যাপক শুল্ক আরোপের বিরোধিতা করেছেন, তবে তিনিও চীনের বিরুদ্ধে কিছু বাণিজ্য বিধিনিষেধ বহাল রেখেছেন।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে ট্রাম্প মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের নির্বাহী আদেশ জারি করেন।
এর ফলে, চীন থেকে আসা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ এবং মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়।
এর ফলশ্রুতিতে চীন বিভিন্ন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে এবং গুগলের বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসার তদন্ত শুরু করে।
কানাডা তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২.২ লক্ষ কোটি টাকা) শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যা পরে তারা স্থগিত করে।
মেক্সিকোও শুল্ক আরোপের কথা জানালেও, তারা এখনো নির্দিষ্ট পণ্যের তালিকা প্রকাশ করেনি।
ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
অনেক কোম্পানি তাদের বিনিয়োগ ও কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে বাধ্য হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা হ্রাস পেতে পারে এবং এর ফলে রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে।
এছাড়াও, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, আমদানি খরচও বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই বাণিজ্য নীতি কত দিন চলবে এবং এর প্রভাব কী হবে, তা এখন দেখার বিষয়।
তবে এটা নিশ্চিত যে, বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতিতে এর একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে, যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বাংলাদেশকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস