দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইয়ুন সুক-ইওলকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
আদালতের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল হওয়ার পরেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
তবে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন এবং ফৌজদারি বিচার এখনও চলছে।
খবর অনুযায়ী, গত ৩রা ডিসেম্বরের স্বল্পকালীন সামরিক আইন জারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মুক্তির পর ইয়ুন তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন এবং গভীর ভাবে মাথা নিচু করে অভিবাদন জানান।
ইয়ুনের আইনজীবীরা আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে রাষ্ট্রপতির আটকাদেশ ছিলো ত্রুটিপূর্ণ।
তারা আরও বলেন, “আইনের শাসনের পথে ফিরে আসার এটি একটি শুরু।
ইয়ুন এখনো সরকারি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত আছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং এই পদক্ষেপকে ‘বেআইনি’ সংশোধনের সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গত মাসে, ইয়ুনের দল তার গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিলের জন্য সিউল সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে আবেদন করে।
তাদের যুক্তি ছিল, গ্রেফতারি বেআইনি ছিল।
এই বছরের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
শুক্রবার, সিউল সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ইয়ুনের মুক্তির আবেদন গ্রহণ করে।
আদালত জানায়, রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে তদন্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
শনিবার সকালে, দক্ষিণ কোরিয়ার কৌঁসুলিরা নিশ্চিত করেছেন যে তারা ইয়ুনের মুক্তির বিরুদ্ধে আপিল করবে না।
স্থানীয় গণমাধ্যম ইয়োনহাপের খবরে বলা হয়েছে, “জরুরি সামরিক আইন বিশেষ তদন্ত সদর দপ্তর আজ রাষ্ট্রপতি ইয়ুনের মুক্তির আদেশ সিউল ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, ইয়ুনের সংক্ষিপ্ত সময়ের সামরিক আইনের ঘোষণা বিদ্রোহের শামিল ছিল।
যদি ফৌজদারি বিচারে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
এদিকে, সাংবিধানিক আদালতও খুব শীঘ্রই ইয়ুনকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বহাল রাখা হবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
শনিবার, প্রায় ৫৫,০০০ ইয়ুন সমর্থক সিউলের প্রধান জেলাগুলোতে সমাবেশ করে।
একই সময়ে, ৩২,৫০০ জন তার বিরুদ্ধে সাংবিধানিক আদালতের কাছে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবারের একটি গ্যালাপ কোরিয়া জরিপে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা ইয়ুনকে পদ থেকে অপসারণের পক্ষে মত দিয়েছেন।
প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি কৌঁসুলিদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছে, এর মাধ্যমে “দেশ ও জনগণকে সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
তারা সাংবিধানিক আদালতের কাছে ইয়ুনকে দ্রুত অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে।
কৌঁসুলিদের সিদ্ধান্তের আগে, শত শত ইয়ুন সমর্থক সুপ্রিম প্রসিকিউটর অফিসের সামনেও বিক্ষোভ করে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের শুক্রবারের সিদ্ধান্ত ইয়ুনের জন্য একটি বিজয় না হলেও, অভিযোগের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
একইসঙ্গে, এটি এমন কিছু আইনি বিষয় উত্থাপন করেছে যার সুস্পষ্ট নজির নেই।
সিউল সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “যদি তদন্ত প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্নগুলোর সমাধান না হয়, তবে উচ্চ আদালত বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করতে পারে।
গত সপ্তাহে ইয়ুনের পৃথক অভিশংসন বিচার শেষ হয়েছে।
যদি ইয়ুনকে অপসারণ করা হয়, তাহলে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা