চীনের খ্যাতিমান লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শিয়াওলু গুও-এর নতুন উপন্যাস ‘কল মি ইশমায়েল’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
হারমান মেলভিলের ধ্রুপদী উপন্যাস ‘মোবি ডিক’-এর এই নতুন ভাষ্যটি ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে সাহিত্যপ্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
শুধু তাই নয়, গুও-এর আত্মজীবনী ‘মাই ব্যাটেল অফ হেস্টিংস’-এর পেপারব্যাক সংস্করণও প্রকাশিত হচ্ছে একই সঙ্গে।
শিয়াওলু গুও-এর জন্ম চীনে, বর্তমানে তিনি বসবাস করেন লন্ডনে।
ইংরেজি ও চীনা ভাষায় লেখা তাঁর ২০টির বেশি বই রয়েছে।
চলচ্চিত্রের সঙ্গেও তাঁর গভীর সম্পর্ক।
লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবে ক্লের ডেনি ও জিম জারমুশ-এর মতো খ্যাতিমান নির্মাতাদের সঙ্গে তিনিও গোল্ডেন লিওপার্ড পুরস্কার জিতেছেন।
‘কল মি ইশমায়েল’ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গুও জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা সাহিত্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এর পুনর্পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন।
বিশেষ করে, ‘মোবি ডিক’-এর প্রেক্ষাপটে প্রাচ্য দর্শন ও সংস্কৃতির একটি নতুন ভাষ্য তৈরি করতে চেয়েছেন তিনি।
উপন্যাসে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে “ক্রিসটেনডম” শব্দটির ব্যবহার নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি জানতে চেয়েছেন, যদি এই শব্দটির পরিবর্তে “তাওবাদ” ব্যবহার করা হতো, তবে কি গল্পের আবেদন কম হতো?
গুও মনে করেন, তাঁর নতুন উপন্যাসটি লেখার পেছনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে একজন “গেরিলা গার্ডেনার”-এর ভাবনা।
তিনি যেমন নীরবে গাছ লাগিয়ে পরিবেশের সুরক্ষার চেষ্টা করেন, তেমনিভাবে এই উপন্যাসেও প্রাচ্যের প্রাচীন দর্শনকে আমেরিকার প্রেক্ষাপটে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন।
গল্পের প্রধান চরিত্র ইশমায়েলের নামকরণেও রয়েছে ভিন্নতা।
লেখক ভিক্টোরীয় যুগের দরিদ্র নারীদের সমুদ্রযাত্রার গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, যারা বাঁচার তাগিদে নাবিকের ছদ্মবেশ ধারণ করত।
লেখিকা জানান, এই উপন্যাসটি লেখার সময় তিনি তাঁর আগের পরীক্ষামূলক সাহিত্য থেকে কিছুটা সরে এসেছেন।
সমকালীন সাহিত্যের অতি-উৎপাদন এবং গল্পের মোড়কে পরিবেশিত তথ্যের আধিক্যে তিনি বিরক্ত।
তাঁর মতে, এখন বিতর্কের প্রয়োজন, সত্যের সঙ্গে সংলাপ জরুরি।
তাই তিনি বেশি করে চিন্তা করতে এবং কম লিখতে চান, যাতে তাঁর লেখনি আরও শক্তিশালী হয়।
গুও-এর মতে, লেখার ক্ষেত্রে তিনি ধারণাকে বেশি গুরুত্ব দেন।
তিনি একটি ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন, যা চলচ্চিত্র, প্রবন্ধ অথবা স্মৃতিকথা আকারে প্রকাশিত হতে পারে।
তাঁর আগের অনেক কাজ জীবনের কাছাকাছি, কারণ ২০০২ সালে তিনি যখন পশ্চিমে আসেন, তখন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার সুযোগ পান।
পঞ্চাশের কোঠায় পৌঁছে তিনি অনুভব করেন, ইতিহাসের গভীরে প্রবেশ করা তাঁর জন্য জরুরি ছিল।
বর্তমানে তিনি ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও কোলরিজের ‘লিরিক্যাল ব্যালাডস’ নিয়মিত পড়ছেন।
এছাড়াও, টমাস হার্ডির ‘টেস অফ দ্য ডি’আর্বারভিলস’ তাঁর পছন্দের একটি বই, যেটিতে তিনি নারীর চরিত্র চিত্রণে নতুনত্ব খুঁজে পান।
এই নিবন্ধটি শিয়াওলু গুও-এর নতুন বই এবং তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।