আমার জীবন গেছে খুনীদের ধাওয়া খেয়ে, আমাকে গুলি করার হুমকিও দিয়েছে অনেকে” – বিতর্কিত তথ্যচিত্র নির্মাতা ড্যান রিড
খ্যাতিমান পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ (Leaving Neverland)-এর পরিচালক ড্যান রিড। এই ছবি মুক্তি পাওয়ার পর তার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রিড জানিয়েছেন, এই ছবি বানানোর পর তাকে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।
রিড জানান, এই ছবির কারণে তাকে এমন সব মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়েছে যারা খুবই হিংস্র প্রকৃতির। তিনি বলেন, “খুনীরা আমাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। এমনকী সশস্ত্র লোকজন আমাকে গুলি করার হুমকি দিয়েছে। বহুবার আমি হুমকির শিকার হয়েছি। আমি নিজেকে কঠিন প্রকৃতির মানুষ হিসেবে জাহির করতে চাই না, তবে যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট কারণ দেখছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি উত্তেজিত হই না। সরাসরি দেওয়া হুমকিগুলোকে আমি গুরুত্ব দিয়েছি। আমার বাড়ির ঠিকানা খুঁজে বের করে সেখানে কিছু পাঠানোর চেষ্টা করা হলে, আমি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি। তবে চীন থেকে কেউ যদি আমাকে ইমেইল করে, তাহলে আমি সেটিকে ততটা গুরুত্ব দিই না। তাদের বিমানে চড়ে আসতে হবে।
ড্যান রিডের কাজের ধারা বরাবরই কঠোর সমালোচনামূলক। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অপরাধের বিরুদ্ধে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং যুদ্ধের মতো বিষয়গুলো নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন। ১৯৯৯ সালে কসোভো যুদ্ধ নিয়ে ‘দ্য ভ্যালি’ (The Valley) এবং ২০১৫ সালে রাশিয়ান মাফিয়াদের নিয়ে ‘ফ্রম রাশিয়া উইথ ক্যাশ’ (From Russia With Cash) তৈরি করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।
তবে ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ (২০১৯)-এর পর তার ওপর আসা হাজারো হুমকির কারণ ছিল ভিন্ন। এই তথ্যচিত্রে ওয়েড রবসন এবং জেমস সেফচাক নামের দুজন ব্যক্তি বিস্তারিতভাবে জানিয়েছিলেন, কিভাবে জ্যাকসন শিশুদের যৌন নির্যাতন করতেন। ছবিটিতে তারা জানান, জ্যাকসন শিশুদের ভালোবাসার ফাঁদে ফেলতেন, তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলতেন এবং পরে তাদের ব্যবহার করতেন।
রিড বর্তমানে ‘লিভিং নেভারল্যান্ড ২: সারভাইভিং মাইকেল জ্যাকসন’ (Leaving Neverland 2: Surviving Michael Jackson) নিয়ে কাজ করছেন। এই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, কিভাবে মূল ছবির পর ওয়েড এবং জেমসকে পুনরায় ভুক্তভোগী হতে হয়েছে। মিডিয়া এবং ভক্তদের সমালোচনার শিকার হয়ে তারা হতাশায় ভুগছিলেন। তথ্যচিত্রে জ্যাকসন এস্টেটের আইনজীবীদের অভিযোগগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাগুলোও তুলে ধরা হয়েছে।
রিড বলেন, “আমি যখন জেমসের সঙ্গে কথা বলি, তখন বলেছিলাম, ‘যদি আমরা এটা করি, তবে আমাদের সেখানে যেতে হবে। আমাদের একেবারে স্পষ্ট হতে হবে, এটা ছিল যৌন নির্যাতন। এটা ভালোবাসা থেকে হওয়া কোনো ভুল ছিল না।
রিড আরও বলেন, “আমি কখনো বুঝিনি কেন কিছু মানুষ বলে, ‘মাইকেল জ্যাকসনের কোনো শৈশব ছিল না, তাই তিনি বড় হননি।’ শৈশব না থাকার কারণে কি শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন করার অধিকার জন্মায়?”
রিডের মতে, জ্যাকসনের আইনজীবীরা তাদের কাজ করছেন।
অন্যদিকে, জ্যাকসনের ভক্তদের মধ্যে যারা ছবিটির বিরোধিতা করেছেন, তাদের নিয়েও কথা বলেছেন রিড। তিনি বলেন, “এখনকার দিনে, মানুষ অনলাইনে তথ্য পায়। সেখানে প্রায়ই বলা হয়, ‘আপনারা জানেন তো, লিভিং নেভারল্যান্ড-এর অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, তাই না?’ কিন্তু আমি বুঝি, এতে কিছু যায় আসে না। কারণ, ওই মানুষগুলো সত্যিটা জানতে চায় না। তারা মাইকেল জ্যাকসনকে ভালোবাসতে চায়।
ড্যান রিড মনে করেন, এখনকার বিশ্বে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি। তিনি বলেন, “যদি অনলাইনে আসা প্রতিটি ভুল তথ্যের জন্য আমি চোখের জল ফেলি, তাহলে আমি একসময় ধুলোয় পরিণত হব।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান