সিয়েনায় চিত্রকলার স্বর্ণযুগ: ১৩০০-১৩৫০ প্রদর্শনী, শিল্পকলার এক উজ্জ্বল দিগন্ত
লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে সম্প্রতি শুরু হয়েছে এক অসাধারণ চিত্রকলার প্রদর্শনী। “সিয়েনা: চিত্রকলার উত্থান, ১৩০০-১৩৫০” শীর্ষক এই প্রদর্শনীতে ইতালির সিয়েনা শহরের ১৩০০ থেকে ১৩৫০ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া চিত্রকর্মগুলো স্থান পেয়েছে। এই সময়ের চিত্রকর্মে ফুটে ওঠা মানবতা, আবেগ এবং শিল্পকলার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এই প্রদর্শনী।
প্রদর্শনীটি যেন এক জাদুঘর, যেখানে সময়ের সাক্ষী হিসেবে জীবন্ত হয়ে উঠেছে মানুষ, প্রকৃতি ও ঘটনার চিত্র। ত্রয়োদশ শতকের শেষার্ধে, ইতালির এই অঞ্চলে শিল্পকলার এক নতুন ধারার জন্ম হয়। শিল্পী ডুচ্চো, সিমোন মার্টিনি, এবং লরেঞ্জেত্তি ভাইদের মতো দিকপালদের হাতে এই ধারা আরও বিকশিত হয়। তাদের তুলিতে ধর্মীয় দৃশ্যেও মানুষের আবেগ, দুঃখ-কষ্ট, হাসি-কান্না – সবকিছুই যেন নতুন রূপে ধরা দিয়েছে।
প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ ডুচ্চোর আঁকা চিত্রকর্ম। তাঁর ছবিতে বাইবেলের বিভিন্ন ঘটনার মানবিক রূপায়ণ দর্শকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। যিশু খ্রিস্টের জন্মের দৃশ্য কিংবা লাজারাসের পুনরুত্থান – প্রতিটি চিত্রই যেন গভীর অনুভূতির প্রকাশ। সিমোন মার্টিনির তুলিতেও ফুটে উঠেছে গভীর শোক আর হাস্যরসের মিশ্রণ। যিশুকে মন্দিরে আবিষ্কারের ঘটনাকে তিনি যেমন ফুটিয়ে তুলেছেন, তেমনই সেইন্ট জনের বেদনাবিধুর চিত্রও এঁকেছেন। লরেঞ্জেত্তি ভাইদের কাজের মধ্যে একদিকে যেমন দেখা যায় ছোট আকারের ছবি, তেমনই আবার বিশাল আকারের ক্রুশবিদ্ধ যিশুর প্রতিকৃতিও দর্শকদের মুগ্ধ করে।
এই সময়ের শিল্পকর্মগুলো শুধু ছবি ছিল না, বরং একেকটি শিল্পকর্ম ছিল বহনযোগ্য এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তৈরি করা বস্তু। অনেক ছোট আকারের চিত্রকর্ম এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা দর্শকদের প্রতিটি দৃশ্যের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। এমনকি, প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে বস্ত্রশিল্পও, যেখানে যিশু খ্রিস্টের শৈশবের পোশাক বিশেষভাবে নজর কাড়ে।
তবে, সিয়েনার এই স্বর্ণযুগ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। চতুর্দশ শতকে আঘাত হানে এক ভয়ংকর মহামারী – ব্ল্যাক ডেথ বা কৃষ্ণ মৃত্যু। এই মহামারীতে সিয়েনার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, যা শহরের সংস্কৃতি ও শিল্পকলার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই প্রেক্ষাপটে, প্রদর্শনীটি যেন শিল্পকলার এক উজ্জ্বল মুহূর্ত, যা সময়ের সাক্ষী হয়ে আজও দর্শকদের আলোড়িত করে।
প্রদর্শনীটি আগামী ২২ জুন পর্যন্ত লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে চলবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান