বিবাহিত জীবনের জটিলতা ও ক্যামেরার চোখে: শিল্পী জোয়েল মায়ারোভিৎজ ও ম্যাগি ব্যারেটের অন্তরঙ্গ চিত্র
দুজন মানুষ, ভালোবাসার বাঁধনে বাঁধা, কিন্তু তাদের পথ আলাদা। একজন বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্রী, অন্যজন ঔপন্যাসিক ও শিল্পী—এদের দাম্পত্য জীবনের গভীরতা ক্যামেরাবন্দী করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। “টু স্ট্রেঞ্জার্স ট্রাইং নট টু কিল ইচ আদার” (Two Strangers Trying Not to Kill Each Other) নামের এই তথ্যচিত্রে ধরা পড়েছে শিল্পী জোয়েল মায়ারোভিৎজ ও তাঁর স্ত্রী ম্যাগি ব্যারেটের জীবনের নানা দিক।
জোয়েল মায়ারোভিৎজ একজন খ্যাতিমান আমেরিকান আলোকচিত্রী। ৯/১১-এর ভয়াবহ ঘটনার পর তিনিই একমাত্র ফটোগ্রাফার ছিলেন যিনি ধ্বংসস্তূপের ছবি তোলার অনুমতি পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, ম্যাগি ব্যারেট একজন প্রতিভাবান লেখিকা ও শিল্পী। তাঁদের এই সম্পর্কের বয়স প্রায় ৩০ বছর।
এই চলচ্চিত্রে তাঁদের সম্পর্কের উত্থান-পতন, ভালোবাসা, ঝগড়া, আর্তি—সব কিছুই স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, জীবনের নানা বাঁকে তাঁরা কীভাবে একে অপরের পাশে ছিলেন। তাঁদের মধ্যেকার মতানৈক্য, যা অনেক সময় তীব্র রূপ নেয়, তাও ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে। বিশেষ করে ম্যাগি যখন তাঁর শিল্পী জীবনের অপূর্ণতা নিয়ে কথা বলেন, তখন জোয়েলের নীরবতা অনেক দর্শকের মনে গভীর রেখাপাত করে। তাঁদের বয়স এখন—জোয়েলের ৮৭ এবং ম্যাগি প্রায় ৭৮ বছর।
এই চলচ্চিত্রটি শুধু একটি দম্পতির গল্প নয়, বরং জীবনের প্রতিচ্ছবি। সম্পর্কের গভীরতা, ভালোবাসার টানাপোড়েন, এবং শিল্পীর জীবন—এসব কিছুই এতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
এই চলচ্চিত্র নির্মাণের পেছনেও রয়েছে এক আকর্ষণীয় গল্প। চলচ্চিত্র নির্মাতা জ্যাকব পার্লমুটার ও ম্যানন ওয়েইমেট, দীর্ঘদিন ধরে জোয়েলের কাজের অনুরাগী ছিলেন। তাঁরা লন্ডনের রাস্তায় তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র বানানোর প্রস্তাব দেন। জোয়েল ও ম্যাগি দুজনেই এই প্রস্তাবে রাজি হন। এরপর নির্মাতারা ২০২১ সালের বড়দিনে ইতালির তাসকানিতে তাঁদের খামারে যান। কোভিড পরিস্থিতির কারণে তাঁরা সেখানে এক বছর ছিলেন।
চলচ্চিত্রটি তৈরির সময়, নির্মাতারা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করেন। জোয়েল ও ম্যাগি তাঁদের বাড়িতে বসানো ক্যামেরার সামনে স্বাভাবিকভাবে নিজেদের উপস্থাপন করেছেন। তাঁদের কথোপকথন, হাসি-কান্না, এমনকি ঝগড়াও ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে।
এই চলচ্চিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ম্যাগি ব্যারেটের জীবনের একটি দুর্ঘটনা। তাঁর একটি মারাত্মক আঘাত লাগে, যার ফলে তাঁর জীবন নতুন মোড় নেয়। এই ঘটনা তাঁদের জীবনকে নতুন করে দেখতে সাহায্য করে। তাঁরা তাঁদের সুন্দর তাসকানীর বাড়ি ছেড়ে লন্ডনে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
এই চলচ্চিত্র তাঁদের সম্পর্কের গভীরতা আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে। ম্যাগি বলেন, “এই ছবি আমাদের ব্যক্তিগত আচরণগুলো নতুন করে দেখতে শিখিয়েছে।
জোয়েল মনে করেন, এই ছবি তাঁদের সম্পর্কের দুর্বলতাগুলো বুঝতে এবং সেগুলোকে শুধরে নিতে সাহায্য করেছে।
তাঁদের সম্পর্কের শুরুটাও বেশ চমকপ্রদ। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বরে, কেপ কডের সমুদ্র সৈকতে তাঁরা প্রথম পরিচিত হন। সেখানে সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে গিয়ে তাঁদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বর্তমানে, তাঁরা লন্ডনে বসবাস করছেন এবং তাঁদের নতুন জীবন উপভোগ করছেন। ম্যাগি তাঁর পুরোনো জীবন এবং শিল্পী জীবনের কথা স্মরণ করে বলেন, এই চলচ্চিত্র তাঁকে নতুনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে। জোয়েল মনে করেন, তাঁদের একসঙ্গে পথচলার এই সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান