শিরোনাম: ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে কোটি কোটি টাকার রাজনৈতিক অনুদান: বিতর্কের ঝড়
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অফ লর্ডসের সদস্যরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অনুদান দিয়েছেন। এই অর্থের পরিমাণ ১০৯ মিলিয়ন পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার বেশি। এই তথ্য প্রকাশের পর ব্রিটেনে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই বিশাল অঙ্কের অনুদানের একটি বড় অংশ এসেছে লর্ডস-এর সদস্য হওয়ার আগে। অর্থাৎ, যারা এখন লর্ডস-এর সদস্য, তাদের অনেকেই এই পদ পাওয়ার আগেই রাজনৈতিক দলগুলোকে মোটা অঙ্কের অর্থ জুগিয়েছেন। এই ধরনের অনুদান রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা যায়, এই অনুদানের সিংহভাগ অর্থ গেছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির কাছে। দলটির তহবিলে গেছে ৬২ শতাংশ অর্থ। বিরোধী দল লেবার পার্টি পেয়েছে ২১ শতাংশ এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটস-এর खाते জমা হয়েছে ১৬ শতাংশ।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলের তহবিলে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান এবং এর সঙ্গে লর্ডস-এর সদস্যপদ লাভের যোগসূত্র গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় দেখা যায়, বড় অংকের অনুদানদাতারা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছেন মূলত অল্প কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। এদের মধ্যে অনেকে ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি। এই ‘সুপার-ডোনার’দের দেওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ৯২ মিলিয়ন পাউন্ড। এই ঘটনা রাজনৈতিক অনুদান এবং লর্ডস-এর সদস্য নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কথা বলছেন অনেকে। তাদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুদানের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হবে। একইসঙ্গে, লর্ডস-এর সদস্য নির্বাচনের প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আনা উচিত, যাতে কোনো ব্যক্তি শুধুমাত্র আর্থিক সামর্থ্যের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে না পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা শুধু যুক্তরাজ্যের জন্য নয়, বরং বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। কারণ, রাজনৈতিক অর্থায়ন এবং ক্ষমতাচর্চার মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান