দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের হাতে নিহত হওয়া বেলজিয়ামের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের লেখা কিছু বিদায়-লিপি সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই চিঠিগুলোতে তাদের দেশপ্রেম, সাহস এবং আত্মত্যাগের মর্মস্পর্শী চিত্র ফুটে উঠেছে। জানা গেছে, এই প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাদের পরিবারের উদ্দেশ্যে এই চিঠিগুলো লিখেছিলেন, যা যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং মানুষের মানবিক দিকগুলো তুলে ধরে।
‘দ্য লাস্ট ওয়ার্ডস’ নামক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২০টি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে এই প্রকল্পের আওতায় আরও প্রায় ৩৫০টি চিঠি সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই আবিষ্কারের ফলে বেলজিয়ামের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি নতুন করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। যুদ্ধের পর সহযোগী মনোভাবাপন্ন কিছু মানুষের কারণে প্রতিরোধের বিষয়টি কিছুটা চাপা পড়ে গিয়েছিল, বিশেষ করে ফ্ল্যান্ডার্স অঞ্চলে।
১৯৪৪ সালের ২৭শে অক্টোবর মিউনিখে নাৎসিদের হাতে নিহত হন নর্বার্ট ভ্যানবেভারেন নামের এক তরুণ প্রতিরোধ যোদ্ধা। মৃত্যুর আগে তিনি তার বাবা-মাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, “আমি হৃদয়ে এক ধরনের শান্তি ও সন্তুষ্টি অনুভব করছি, কারণ আমাদের মৃত্যু একটি উদ্দেশ্য পূরণ করবে: আপনারা আবার স্বাধীন হবেন এবং জার্মানির শাসন থেকে মুক্তি পাবেন।” নর্বার্টের এই চিঠিটি তার পরিবারের কাছে ছিল অজানা, যা ৮০ বছর পর সম্প্রতি উদ্ধার করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা মনে করেন, যুদ্ধের সময় মানুষের মধ্যে যে ত্যাগ ও দেশপ্রেম দেখা যায়, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা চান, মানুষ যেন এইসব বীর যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কথা মনে রাখে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেলজিয়ামের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই যোদ্ধাদের অবদান অনস্বীকার্য।
বেলজিয়ামের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, এই ধরনের চিঠিগুলো শুধু ইতিহাসের সাক্ষীই নয়, বরং বর্তমান সময়েও এর প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। কারণ, বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে মানুষ এখনো লড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা মনে করেন, যুদ্ধের স্মৃতিগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা উচিত। বিশেষ করে ফ্ল্যান্ডার্সের মতো অঞ্চলে, যেখানে কিছু মানুষ সহযোগিতা করেছিল, তাদের কথাগুলো যেন ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে না যায়। এই চিঠিগুলো সেই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসকে আবার ফিরিয়ে এনেছে।
এই প্রসঙ্গে, আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. স্যামুয়েল ক্রুইজিংগা বলেন, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের গল্পগুলো ফিরিয়ে আনা বেলজিয়ামের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে দেশটি বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান