ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে ঘন ঘন পরিবর্তন, অনিশ্চয়তার মেঘ বিশ্ব বাণিজ্যে
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো এবং কানাডার কিছু পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আগামী ২ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে এবং তা বাড়ানোও হতে পারে। একই সঙ্গে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা আসার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি তিনি।
ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। প্রথমে এই সিদ্ধান্ত এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে, বুধবার তিনি অটোমোবাইল প্রস্তুতকারকদের উপর শুল্ক আরোপের বিষয়টি আরও এক মাসের জন্য পিছিয়ে দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার তিনি আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, ইউএসএমসিএ (USMCA) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ এপ্রিল মাস পর্যন্ত স্থগিত করেন।
ট্রাম্প বলেন, “এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই পরিবর্তনগুলো করা হচ্ছে, এরপর আমি আর এটা করব না। আমি অটোমেকারদের বলেছিলাম, ‘দেখো, আমি শুধু এই একবারের জন্যই এটা করছি’।”
তবে, শুল্কের পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্পের এই ঘন ঘন পরিবর্তন চলছেই। শুক্রবার তিনি কানাডার কাঠ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই শুল্কগুলো সোমবার থেকে কার্যকর হতে পারে।
শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাম প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন। অন্যদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, কানাডার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা বহাল থাকবে। ট্রুডো বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই নীতি ভবিষ্যতে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড ল্যাটনিক এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে নিশ্চিত করেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আগামী বুধবার থেকে কার্যকর হবে। এছাড়া, কানাডার দুগ্ধ ও কাঠের পণ্যের উপর শুল্ক ‘২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে’।
ল্যাটনিক জানান, ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া শুল্কগুলো ততদিন পর্যন্ত চলবে, যতদিন না ট্রাম্প উভয় দেশের ‘ফেন্টানিল’ নামক মাদক পাচার বন্ধে সন্তুষ্ট হন। এবিসি নিউজের ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হাসেটও একই ধরনের ইঙ্গিত দেন। হাসেট বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত বাণিজ্য যুদ্ধ নয়, বরং মাদক যুদ্ধেরই অংশ, যার মূল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ বন্ধ করা।
হাসেট আরও দাবি করেন, যদিও কানাডা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধভাবে মাদক আমদানির মাত্র ০.২ শতাংশের জন্য দায়ী, তবুও দেশটি ফেন্টানিলের একটি ‘প্রধান উৎস’।
বাণিজ্যিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক growth কমে যাওয়ার লক্ষণ বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, যা একটি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। মারিয়া বার্টিরোমোর সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্পকে যখন ২০২৫ সালে মন্দা আসার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বলেন, “আমি এ ধরনের বিষয় নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাই না। একটা পরিবর্তনের সময় চলছে, কারণ আমরা এখন বড় কিছু করছি।”
ট্রাম্প যোগ করেন, এই পরিবর্তনের জন্য ‘কিছুটা সময়’ লাগবে এবং ‘অবশেষে এটা কৃষকদের জন্য দারুণ হবে’।
কনফারেন্স বোর্ডের সর্বশেষ ভোক্তা জরিপে দেখা গেছে, আগামী এক বছরের মধ্যে মন্দা আসার আশঙ্কা করা মানুষের সংখ্যা ফেব্রুয়ারিতে নয় মাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।
মুডি’স-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জ্যান্ডি সিএনএনকে বলেন, “ট্রাম্পের আমলে যে ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে, তা সম্ভবত নজিরবিহীন এবং এটি মানুষকে বেশ উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যদি আগামী তিন মাস ধরে মানুষের আস্থা কমতে থাকে এবং ভোক্তারা তাদের খরচ কমিয়ে দেয়, তাহলে খেলা শেষ।”
বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতি পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর উপরও প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্য অস্থিরতা তৈরি হলে, সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটে এবং অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন