দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নাট্যকার আথল ফুগার্ডের প্রয়াণ: বিশ্ব হারালো এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর
বর্ণবাদের বিভীষিকা আর মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যিনি লিখে গিয়েছেন, সেই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রখ্যাত নাট্যকার, পরিচালক এবং ঔপন্যাসিক আথল ফুগার্ড ৯২ বছর বয়সে মারা গেছেন। গত শতকের অন্যতম প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সংস্কৃতি জগৎ। তাঁর নাটকগুলো কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষদের প্রতি হওয়া অবিচারকেই তুলে ধরেনি, বরং বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত মানুষের প্রতিবাদের ভাষাও জুগিয়েছে।
আথল ফুগার্ডের জন্ম ১৯৩২ সালে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ‘সিজ্উ বানজি ইজ ডেড’, ‘দ্য আইল্যান্ড’, ‘মাস্টার হ্যারল্ড…অ্যান্ড দ্য বয়েজ’ এবং ‘সোতসি’র মতো জনপ্রিয় নাটক ও উপন্যাস। বর্ণবাদের বিভেদকামী শাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সবসময় সোচ্চার। তাঁর লেখাগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের কালো চামড়ার মানুষের প্রতি চরম বৈষম্য এবং নিপীড়নের চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ফুগার্ড তাঁর কাজের মাধ্যমে সমাজের গভীর ক্ষতগুলো চিহ্নিত করেছেন, যা মানুষকে নাড়া দিয়েছে।
আফ্রিকান থিয়েটার ওয়ার্কশপ এবং সার্পেন্ট প্লেয়ার্সের মতো বহু-জাতিগোষ্ঠীর নাট্যদল তৈরি করে ফুগার্ড তাঁর কাজের ধারাকে আরও বিস্তৃত করেন। তিনি শ্বেতাঙ্গ হয়েও কৃষ্ণাঙ্গ সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তাঁদের অভিজ্ঞতাকে তাঁর নাটকের বিষয় করেছেন। তাঁর কাজের জন্য তিনি যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে ‘সাংস্কৃতিক আত্মসাৎ’-এর অভিযোগও উঠেছে। তবে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন অবস্থান তাঁকে সবসময় আলোচনার কেন্দ্রে রেখেছে।
নেলসন ম্যান্ডেলার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ফুগার্ডের নাটকগুলো বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ‘দ্য আইল্যান্ড’ নাটকে ম্যান্ডেলার কারাজীবনের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। এই নাটকের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন এবং তাঁদের দুঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরেছেন।
বর্ণবাদ বিলুপ্তির পর, ফুগার্ডের নাটকগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার ‘সত্য ও পুনর্মিলন’-এর মতো বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করে। তাঁর শেষ দিকের কাজ ‘দ্য ট্রেইন ড্রাইভার’-এ শ্বেতাঙ্গ এক ব্যক্তির জীবন তুলে ধরা হয়েছে, যে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হওয়া এক কৃষ্ণাঙ্গ মা ও শিশুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যায়।
আথল ফুগার্ডের নাটকগুলো শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেক্ষাপটেই আবদ্ধ ছিল না, বরং বিশ্বজুড়ে মানুষের অধিকার ও মুক্তির প্রশ্নে এক শক্তিশালী বার্তা বহন করে। তাঁর কাজগুলো আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ এগুলো মানুষের ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে বাঁচার এবং ন্যায়বিচারের গুরুত্বের কথা বলে। তাঁর প্রয়াণ বিশ্ব মঞ্চে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান