ইথিওপিয়ার আমহারা অঞ্চলের একটি শান্তিপূর্ণ জনপদ, আওরা আম্বা। কয়েক দশক ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের মাঝেও তারা নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখেছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই জনপদও গভীর সংকটে। সশস্ত্র গোষ্ঠী ফানোর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষের কারণে সেখানকার জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। সেখানকার মানুষের শান্তিপ্রিয় জীবন আজ হুমকির মুখে।
আওরা আম্বা গ্রামটি ১৯৭০-এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ৬০০ জন মানুষের এই গ্রামটিতে নারী-পুরুষ সবাই মিলেমিশে কাজ করেন। এখানকার মানুষেরা সবাই মিলেমিশে, সমানভাবে কাজ করেন। তাদের মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই কারণে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছে।
কিন্তু ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায়। প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আঞ্চলিক বাহিনী ভেঙে দিতে চাইলে ফানো নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী বিদ্রোহ করে। এর ফলস্বরূপ, আমহারার বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় ভয়াবহ সংঘর্ষ। সরকারি বাহিনী এবং ফানো উভয় পক্ষের হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছে।
আওরা আম্বা গ্রামের মানুষগুলো সবসময় শান্তিপ্রিয়। তাদের জীবনযাত্রায় এর একটি বড় প্রভাব পড়েছে। গ্রামের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। বাইরের জগৎ থেকে আসা পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে গেছে। একসময় যারা তাদের তৈরি পোশাক কিনতেন, তারাও এখন আসতে পারছেন না। এমনকি, বাজারে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে যাওয়াও এখন ঝুঁকিপূর্ণ।
গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অপহরণকারীদের ভয়ে তারা এখন বাজারে যেতেও ভয় পান। কারণ, হাইওয়েতে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গ্রামের অনেকে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। সেখানকার একটি স্কুলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আওরা আম্বা’র প্রতিষ্ঠাতা জুমরা নুরু, যিনি ৭৬ বছর বয়সী, বর্তমানে রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা শুধু শান্তি চাই। আমরা বিশ্বাস করি, আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আমহারায় সরকারি বাহিনী নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে। ফানো যোদ্ধারাও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আওরা আম্বার মানুষগুলো আবারও তাদের পুরনো কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে করছেন। ১৯৮৮ সালে তারা একবার বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। কারণ, তৎকালীন সরকারের সঙ্গে তাদের মতের মিল ছিল না।
বর্তমানে সেখানকার মানুষগুলো একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা চান, আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে এই সংঘাতের অবসান হোক। তাদের একটাই চাওয়া— শান্তি ফিরে আসুক তাদের প্রিয় জন্মভূমিতে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা