পুরুষ নির্যাতন: নীরবতার কারণ ও উত্তরণের উপায়
পুরুষরাও যে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হতে পারেন, এই বিষয়টি সমাজে এখনো খুব কম আলোচিত। অনেক সময় লোকলজ্জা, সামাজিক ধারণা, এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা কাঠামোর অভাবে পুরুষরা মুখ খুলতে পারেন না। সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশেই পুরুষরা তাদের ওপর হওয়া নির্যাতনের কথা বলতে দ্বিধা বোধ করেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও এই চিত্র সম্ভবত একই রকম, যদিও এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া কঠিন।
পুরুষদের নীরব থাকার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সামাজিক চাপ। আমাদের সমাজে পুরুষদের “শক্তিশালী” এবং “পুরুষোচিত” হিসেবে চিত্রিত করা হয়। নির্যাতনের শিকার হলে, অনেক পুরুষ মনে করেন, তাদের দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে যাবে, যা তাদের সম্মানহানি করবে। ছোটবেলা থেকে ছেলেদের শেখানো হয়, “কান্না করা দুর্বলতা” এবং “সবকিছু সহ্য করতে হয়”। এই ধরনের মানসিকতা তাদের সাহায্য চাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে।
নির্যাতনের শিকার হওয়া পুরুষদের জন্য সহায়তা পাওয়াটাও কঠিন। বাংলাদেশে পুরুষদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র এবং কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা এখনো অপ্রতুল। অনেক সহায়তা কেন্দ্র নারীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও, পুরুষরা তাদের পরিবারের সম্মানহানির ভয়েও অনেক সময় নির্যাতনের কথা গোপন করেন।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পুরুষদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্যাতনের শিকার হওয়া পুরুষদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। তাদের মানসিক আঘাত থেকে সেরে উঠতে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কাউন্সেলিং ও থেরাপির ব্যবস্থা করতে হবে। একইসাথে, পুরুষদের জন্য আলাদা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা প্রয়োজন, যেখানে তারা নিরাপদ আশ্রয় এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবেন।
নির্যাতিত পুরুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পরিবার ও বন্ধুদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং সাহায্য করতে এগিয়ে আসাটা জরুরি। নির্যাতনের শিকার হওয়া কোনো পুরুষ যদি মুখ খোলেন, তবে তাকে সমর্থন করুন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে উৎসাহিত করুন।
যদি কোনো পুরুষ নির্যাতনের শিকার হন, তবে তিনি নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন:
মনে রাখতে হবে, নির্যাতন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্যাতনের শিকার হওয়া পুরুষের একাকীত্ব অনুভব করা উচিত নয়। সমাজের সকলেরই উচিত এই বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং নির্যাতিত পুরুষদের পাশে দাঁড়ানো।
সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন:
তথ্যসূত্র: সিএনএন।