বার্মিংহামের মেয়র র্যান্ডাল উডফিন: বন্দুক সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই
যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যের বার্মিংহাম শহরের মেয়র র্যান্ডাল উডফিন, যিনি ব্যক্তিগত শোক আর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির এক কঠিন পথ পাড়ি দিচ্ছেন। ২০১২ সালে তার বড় ভাই রাল্ফকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে, একই ধরনের বন্দুক হামলায় নিহত হন তার ভাইপোর ছেলে রাল্ফ জুনিয়র। এই শোক আর বেদনার গভীরতা থেকেই তিনি শহরকে নিরাপদ করার সংগ্রামে নেমেছেন।
মেয়র উডফিন ছোটবেলায় তার ভাইয়ের কাছ থেকে গাড়ি ও সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা খুঁজে পান। তাদের জীবনযাত্রা ভিন্ন পথে চললেও, তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল। ভাইয়ের মৃত্যুর পর, উডফিন প্রথমে শোককে চেপে যান, কিন্তু পরে উপলব্ধি করেন যে এই গভীর ক্ষতকে সারানোর জন্য তিনি মনোচিকিৎসার সাহায্য নিতে পারেন। ভাইয়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি অবশেষে বলতে পেরেছিলেন, “আমি তোমাকে ভালোবাসি”।
বার্মিংহামে বন্দুক সহিংসতার চিত্র ভয়াবহ। ২০১২ সালে, যখন রাল্ফ খুন হন, তখন সে বছর শহরে ৭২টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। ২০১৭ সালে, যখন তার ভাইপো নিহত হন, সেই বছর এই সংখ্যা বেড়ে ১১৭-এ দাঁড়ায়। এমনকি গত বছর, শহরটিতে ১৫১ জন খুন হয়।
মেয়র উডফিন মনে করেন, বন্দুক সহিংসতা একটি জটিল সমস্যা, যা শহরের দারিদ্র্য, দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা এবং সহিংসতার সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, “আমেরিকা সহিংসতাকে উদযাপন করে। এটি আমাদের ভিডিও গেম, সঙ্গীত, টিভি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যমান।” তিনি মনে করেন, বার্মিংহামের অতীতের ইতিহাস, যেখানে জাতিগত সহিংসতা ও নিপীড়ন ছিল, বর্তমানের এই অবস্থার জন্য দায়ী।
মেয়র উডফিন বন্দুক সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি ২০১৬ সালে বার্মিংহাম সিটি স্কুল বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি শহরের প্রথম সারির শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম যিনি বন্দুক সহিংসতাকে একটি জনস্বাস্থ্য সংকট হিসেবে ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে, এই সমস্যার সমাধানে কমিউনিটি এবং সরকারি সংস্থাগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি ‘প্রজেক্ট সেফ স্ট্রিটস’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু করেছেন, যার মাধ্যমে শহরের কিছু এলাকায় বন্দুক হামলা প্রতিরোধের জন্য কংক্রিটের ব্যারিয়ার বসানো হয়েছে। এছাড়াও, তিনি রাজ্য সরকারের কাছে সাধারণ বন্দুক আইন সংস্কারের জন্য চাপ দিচ্ছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনেও উডফিন সক্রিয়। তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, বন্দুক সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং নাগরিকদের জন্য কথা বলতে। তিনি মনে করেন, এই সংকটকালে দুর্বল না হয়ে, সাহস নিয়ে রুখে দাঁড়ানো উচিত।
মেয়র উডফিন-এর এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক সংগ্রাম, বার্মিংহাম শহরকে একটি নিরাপদ স্থানে পরিণত করার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান