জাপানের ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয়তা হ্রাস পেলেও, ২০১১ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রটিতে এখনো কাজ করাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
সেখানে কর্মীদের উচ্চমাত্রার বিকিরণ এবং মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।
সম্প্রতি, বার্তা সংস্থা এপির (AP) একটি অনুসন্ধানী দল কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে সেখানকার কর্মীদের কাজের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে।
ফুকুশিমার এই কেন্দ্রটিতে এখনো পর্যন্ত ৮৮০ টনের বেশি গলিত পারমাণবিক জ্বালানি অপসারণ করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।
ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি চুল্লিখানা থেকে এই জ্বালানি পরিষ্কার করার কাজটি কয়েক দশক ধরে চলতে পারে।
কর্মীদের জন্য সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন তারা চুল্লিখানার ভেতরে প্রবেশ করে।
সেখানে তাদের বিশেষ সুরক্ষামূলক পোশাক পরতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে – ফিল্টারযুক্ত মাস্ক, একাধিক স্তরের গ্লাভস, মোজা, বিশেষ পোশাক এবং হেলমেট।
এছাড়া, তাদের কাজ করার সময়কালও সীমিত থাকে, যা তাদের মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে তোলে।
চুল্লিখানার ভেতরে, বিশেষ করে ২ নম্বর চুল্লিখানায় বিকিরণের মাত্রা এখনো অনেক বেশি।
এই কারণে, সেখানে কাজ করা কর্মীরা স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করতে বাধ্য হন।
এই বিষয়ে, মিশনের দলনেতা ইয়াসুনোবু ইয়োকোকাওয়া জানান, “উচ্চমাত্রার বিকিরণের মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করাটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের ছিল।
কাজটি ছিল বেশ কঠিন।” তাদের শ্বাস নিতে অসুবিধা হতো এবং সুরক্ষা পোশাকের কারণে শরীরে ঘাম হতো, যা তাদের চলাফেরার ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করত।
কর্মীরা তাদের সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
তারা গ্লাভস এবং মোজার চারপাশে টেপ লাগাতেন এবং বিকিরণ পরিমাপ করার জন্য ব্যক্তিগত ডসিমিটার ব্যবহার করতেন।
এছাড়াও, তারা কিভাবে কাজ করবেন, সে সম্পর্কে আগে থেকেই মহড়া করতেন, যাতে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব কমানো যায়।
জ্বালানি অপসারণের কাজ শুরু করার আগে, কর্মীদের কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
একবার, রোবটকে চুল্লিখানার মূল অংশে প্রবেশ করানোর জন্য ব্যবহৃত পাইপগুলো ভুলভাবে স্থাপন করা হয়েছিল।
এছাড়াও, উচ্চ তেজস্ক্রিয়তার কারণে রোবটের ক্যামেরাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যা পরে পরিবর্তন করতে হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, যদিও কর্মীদের কারও কারও শরীরে বিকিরণের মাত্রা অনুমোদিত সীমার নিচে ছিল, তবুও অনেক কর্মী তাদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বর্তমানে, কেন্দ্রটিতে কর্মরত প্রায় ৫,৫০০ কর্মীর মধ্যে অনেকেই তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
ফুকুশিমার এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই লক্ষ্যে, কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
এর মধ্যে রয়েছে – ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো থেকে তেজস্ক্রিয় পানি অপসারণ এবং গলিত জ্বালানি পরীক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য নতুন অবকাঠামো তৈরি করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন্দ্রটি থেকে তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা একটি দীর্ঘ এবং কঠিন প্রক্রিয়া।
তাদের ধারণা, এই কাজটি সম্পন্ন করতে এক শতাব্দীরও বেশি সময় লাগতে পারে।
জাপান সরকার ২০৫১ সাল পর্যন্ত এই কাজটি শেষ করার প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তবে গলিত জ্বালানি অপসারণের কাজ এরই মধ্যে প্রায় তিন বছর পিছিয়ে গেছে।
ফুকুশিমার এই ঘটনা শুধু জাপানের জন্যই নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (AP)।