শিরোনাম: বায়ু দূষণে জর্জরিত বাংলাদেশ: বিশ্বের দূষিত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম
বিশ্বজুড়ে বায়ুদূষণের এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক সংস্থা আইকিউএয়ার (IQAir) এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই দূষিত বাতাস গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। ১৩৮টি দেশের ৪০,০০০ বায়ুমান নিরীক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এই প্রতিবেদনে দূষিত বাতাসের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ উদ্বেগজনক।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের মাত্র ১৭ শতাংশ শহরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বায়ুমান নির্দেশিকা মেনে চলা হয়। দূষিত বাতাসের দিক থেকে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চাদ, কঙ্গো, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারত। ভারতের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ, যেখানে শীর্ষ ৯টি দূষিত শহরের মধ্যে ৬টিই ভারতে অবস্থিত।
ঢাকার বায়ুদূষণের চিত্রটিও বেশ উদ্বেগের। এখানকার বায়ুদূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে, অনেক সময় সাধারণ মানুষের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী রিকশাচালকদের প্রায়ই মুখ ঢেকে দূষণ থেকে বাঁচতে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক দেশে পর্যাপ্ত মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় দূষণের প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকার প্রতি ৩.৭ মিলিয়ন মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র একটি মনিটরিং স্টেশন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বায়ুদূষণ কমাতে নতুন নতুন মনিটরিং স্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে। দূষণ পর্যবেক্ষণের উন্নতির ফলে এই বছর ৮,৯৫৪টি নতুন স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর দূতাবাস ও কনস্যুলেট থেকে পাওয়া তথ্য প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়ায় বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণে একটি বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে।
বায়ুদূষণের কারণে মানুষের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন দূষিত বাতাস গ্রহণের ফলে শ্বাসকষ্ট, স্মৃতিভ্রংশ (আলঝাইমার রোগ) এবং ক্যান্সারের মতো রোগ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ এই বায়ু দূষণ।
মালয়েশিয়া-ভিত্তিক সানওয়ে সেন্টার ফর প্ল্যানেটারি হেলথের প্রধান বিজ্ঞানী ও বায়ু দূষণ বিশেষজ্ঞ ফাতিমা আহমাদ এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বায়ুদূষণের মাত্রা কমাতে আরও অনেক কিছু করা দরকার। তিনি আরও বলেন, “খারাপ পানি বা পানি না থাকলে মানুষকে হয়তো দিনে আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলা যায়, পানি আসবে। কিন্তু খারাপ বাতাস হলে তো শ্বাস নেওয়া বন্ধ করতে বলা যায় না।”
আইকিউএয়ারের এই প্রতিবেদনে বায়ু দূষণের কারণ এবং তা থেকে উত্তরণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বেইজিং, সিউল এবং পোল্যান্ডের রিবনিকের মতো শহরগুলো যানবাহনের দূষণ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং শিল্প কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে বায়ুর গুণগত মান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। তারা পরিচ্ছন্ন শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং গণপরিবহনে বিনিয়োগ করেছে।
এছাড়াও, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন (ASEAN) আন্তঃসীমান্ত ধোঁয়াশা দূষণ চুক্তি করে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও এর সাফল্য সীমিত, তবুও এই অঞ্চলের ১০টি দেশ একসঙ্গে কাজ করে বনভূমি পোড়ানোর কারণে সৃষ্ট দূষণ কমাতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে।
গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অ্যালায়েন্সের ক্যাম্পেইন লিড শ্বেতা নারায়ণ বলেন, যেসব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণ হয়, সেখানে কয়লা, তেল ও গ্যাস পোড়ানোর মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ুর গুণগত মান আরও খারাপ হচ্ছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানো জরুরি। তিনি আরও বলেন, বায়ু দূষণ ও জলবায়ু সংকট – “একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ”।
তথ্য সূত্র: আইকিউএয়ার প্রতিবেদন, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।